আমবেদকর: একজন অসাধারন ব্যক্তিত্ব
প্রবর্তন:
ভারতের ইতিহাসে আম্বেদকর একটি অবিস্মরণীয় নাম। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট আইনজীবী, অর্থনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং রাজনীতিবিদ। তিনি দলিত সম্প্রদায়ের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন এবং তাদের জীবনে আলোর দিশা দেখিয়েছেন।
জন্ম ও শৈশব:
ডঃ বি. আর. আম্বেদকরের জন্ম ১৪ এপ্রিল, ১৮৯১ সালে মধ্যপ্রদেশের মহুতে একটি দরিদ্র দলিত পরিবারে। তিনি ছিলেন ১৪ সন্তানের মধ্যে চতুর্দশ। তার শৈশব দারিদ্র্যের মধ্যে কেটেছে এবং তাকে বর্ণভেদের শিকার হতে হয়েছিল।
শিক্ষা ও কর্মজীবন:
আম্বেদকর ছিলেন একজন উজ্জ্বল ছাত্র। তিনি মুম্বাই, নিউইয়র্ক এবং লন্ডনে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন। ভারতে ফিরে তিনি আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
সামাজিক সংস্কার:
আম্বেদকর সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর তোলার জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন এবং বর্ণভেদ প্রথার বিলোপের জন্য কাজ করেন। ১৯৩৫ সালে তিনি পুনা চুক্তি নামে পরিচিত একটি চুক্তি করেন, যা দলিতদের স্বতন্ত্র নির্বাচনীক্ষেত্রের দাবি করে।
ভারতীয় সংবিধানের শিল্পী:
আম্বেদকর স্বাধীন ভারতের সংবিধানের প্রধান শিল্পী ছিলেন। তিনি সংবিধানের খসড়া কমিটির সভাপতি ছিলেন এবং এর মূলনীতিগুলি তার সামাজিক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিল। সংবিধানে তিনি ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করেছিলেন।
রাজনৈতিক কর্মজীবন:
আম্বেদকর একজন সফল রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ ভারত সরকারের নির্বাহী পরিষদ (ভাইসরয়ের কাউন্সিল) এর শ্রম সদস্য হিসাবে নিযুক্ত হন। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম আইন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বৌদ্ধধর্মে রূপান্তর:
১৯৫৬ সালে আম্বেদকর হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধধর্মে রূপান্তরিত হন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে বৌদ্ধধর্ম তাকে একটি সাম্যতাবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে, যেখানে সবাই সমান।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার:
আম্বেদকর ৬ ডিসেম্বর, ১৯৫৬ সালে দিল্লিতে মারা যান। তিনি ভারতের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় নেতাদের একজন হিসেবে স্মরণ করা হয়। তাঁর কাজ ভারতীয় সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে এবং তিনি অধিকার, ন্যায় ও সমানতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন।
উপসংহার:
ডঃ বি. আর. আম্বেদকর ছিলেন ২০ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় ব্যক্তিত্বদের একজন। তাঁর অসামান্য সংগ্রাম, বুদ্ধি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা তাঁকে ভারতের ইতিহাসে একটি অবিনশ্বর প্রতীক করে তুলেছে। তাঁর কাজ আজও আমাদেরকে সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং একটি ন্যায়সঙ্গত ও সুষম সমাজ গঠন করতে অনুপ্রাণিত করে।