ভীমরাও রামজি আম্বেদকর ১৪ এপ্রিল,১৮৯১ সালে মহারাষ্ট্রের মহুতে একটি অস্পৃশ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জীবনের শুরু থেকেই অস্পৃশ্যতার নৃশংসতার শিকার হতে থাকেন। শিক্ষা তাঁর কাছে ছিল মুক্তির প্রধান অস্ত্র। তিনি বহু কষ্টে বি.এ. এবং পরে আইনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
অস্পৃশ্যতা বিরোধী আন্দোলন ছিল আম্বেদকরের জীবনের প্রধান লক্ষ্য। তিনি হিন্দু সংস্কৃতি ও সমাজব্যবস্থায় নিहित অস্পৃশ্যতার ভয়ঙ্কর চর্চার বিরুদ্ধে সরব কণ্ঠে প্রতিবাদ করেন। ১৯২৭ সালে তিনি দলিত আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং 'বেহম' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি দলিতদের নাগরিক অধিকার, শিক্ষা এবং வேலை করার সুযোগের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
১৯৩২ সালে আম্বেদকর 'পুনা চুক্তি' নামে পরিচিত একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, যা দলিতদের হিন্দু মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দেয়। তিনি স্বাধীন ভারতের সংবিধানের খসড়া কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন এবং ভারতীয় সংবিধানের শিল্পী হিসাবে পরিচিত হন।
আম্বেদকর শুধুমাত্র অস্পৃশ্যদের জন্যই নয়, সমস্ত নিপীড়িত ও বঞ্চিতদের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছেন। তিনি মহিলাদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার এবং ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য সবসময় আমরণ সংগ্রাম করেছেন। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান রাখেন।
আম্বেদকরের শিক্ষা আজও আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন যে, অস্পৃশ্যতা এবং সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি আমাদের দেখিয়েছেন যে, শিক্ষা এবং সংগঠন মুক্তির পথে শক্তিশালী অস্ত্র।
১৯৫৬ সালের ১৪ অক্টোবর, আম্বেদকর এবং তাঁর সমর্থকরা হিন্দু ধর্মের বর্ণব্যবস্থা এবং অস্পৃশ্যতা চর্চার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। তিনি তাঁর সমর্থকদের বৌদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বলেন, যা তিনি অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি অস্ত্র হিসাবে দেখেছিলেন।
আম্বেদকরের উত্তরাধিকার অপরিসীম। তিনি ভারতীয় সমাজে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লবের একজন দৃঢ় সমর্থক ছিলেন। তাঁর সংগ্রাম এবং শিক্ষা আজও দলিতদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছে। তাঁর আদর্শ আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে, আমাদের সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং সকলের জন্য সাম্য এবং ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।