আমার বাংলা চেতার সাথে দুর্দান্ত ঠাকুর




এটা এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। আমার স্কুলের দিনগুলোতে, আমি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে ভালোবাসতাম। তবে, বিষ্ণুপুরের আমাদের ছোট্ট শহরে, ইংরেজি শেখার উপর জোর দেওয়া হতো। আমার জন্য বাংলা ভাষা ছিল একটি বিরল সুযোগ, এবং আমি সেই সুযোগে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম।

একদিন, স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে, আমাকে ভারতীয় সাহিত্যের একটি অংশ পাঠ করতে বলা হল। আমি খুশি হয়ে গেলাম। আমি আগে কখনই প্রকাশ্যে কিছু পড়িনি, কিন্তু আমি ভেবেছিলাম আমি এটা করতে পারব। কিন্তু যখন আমি স্টেজে উঠলাম, আমার মন খালি হয়ে গেল। আমার মনে কোনো শব্দ আসছে না। আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম।

ঠিক সেই মুহূর্তে, আমার বাংলা শিক্ষক, ঠাকুর মশাই, আমার সামনে এসে দাড়ালেন। তিনি হাত ধরে আমাকে শান্ত করলেন এবং বললেন, "ভয় পেয়ো না। এটা শুধু একটি সুযোগ। তোমার মধ্যে যা আছে তা বের করে দাও।" তার কথাগুলো আমার মনে প্রশান্তির সঞ্চার করলো। আমি নিঃশ্বাস নিয়ে শুরু করলাম।

যখন আমি পড়তে শুরু করলাম, আমার ভয় দূরে সরে গেল। শব্দগুলো আমার মুখ থেকে সহজেই বেরিয়ে আসছিল। আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম, আমার ভাষার প্রতি আমার প্রেম এবং সেই প্রেমকে অন্যদের সাথে শেয়ার করার সুযোগ।

যখন আমি পড়া শেষ করলাম, হল তালিতে ভরে উঠল। ঠাকুর মশাই আমার কাছে এসে বললেন, "এই তো আমার ছেলে। তুমি অসাধারণ ছিলে।" তার কথাগুলো আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। সেই থেকেই, আমার বাংলা চেতার সাথে ঠাকুর মশাইয়ের গল্পটা আমার মনে সযত্নে পুষে রেখেছি।

বছরের পর বছর ধরে, ঠাকুর মশাই আমাকে অনুপ্রাণিত করতে থাকলেন। তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন যে ভাষা শুধুই শব্দ নয়, এটি একটি সংস্কৃতি, একটি ঐতিহ্য। তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন যে আমার ভাষাকে ভালোবাসা এবং সেটির সাথে যুক্ত থাকা আমার দায়িত্ব।

আজ, আমি একজন শিক্ষক। আমি আমার ছাত্রদের শেখাচ্ছি বাংলা ভাষার গুরুত্ব, ঠিক যেমন ঠাকুর মশাই আমাকে শিখিয়েছিলেন। আমি তাদের বলছি, "আমাদের ভাষা আমাদের সংস্কৃতির মূল। এটি সংরক্ষণ করা এবং এর সাথে যুক্ত থাকা আমাদের সবার দায়িত্ব।"

আমি জানি না ঠাকুর মশাই আজ কোথায় আছেন। কিন্তু আমি জানি যে তিনি আমার হৃদয়ে বাস করছেন, আমাকে প্রতিদিন অনুপ্রাণিত করছেন। তিনি আমার জীবনে একটি দুর্দান্ত শক্তি ছিলেন, এবং আমি তাকে কখনোই ভুলব না।

ঠাকুর মশাই, আপনি আমার জীবনে একটি দীপ্তিমান তারকা ছিলেন। আপনাকে ধন্যবাদ, আমি আমার বাংলা চেতার গর্বিত।