আরভিন্দ কেজরিওয়াল: দিল্লির নির্মাণকারী নাকি রাজনৈতিক ব্যাঙের ছাতা?




আরভিন্দ কেজরিওয়াল একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব যিনি দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আন্না হজারের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের মূল ব্যক্তিত্বদের মধ্যে একজন ছিলেন, এবং পরবর্তীতে তিনি আম আদমি পার্টি (আপ) গঠন করেছিলেন। আপ ২০১৫ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতায় আসে এবং কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী হন।
তার কার্যকাল মিশ্রিত ফলাফল নিয়ে ছিল। তিনি বিদ্যুৎ ও জলের দাম কমানো, সরকারি স্কুলগুলিতে উন্নতিসহ দিল্লির জনগণের জন্য বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। তবে তিনি প্রতিবেশী রাজ্যগুলি, কেন্দ্রীয় সরকার এবং এমনকি তার নিজের দলের সদস্যদের সাথে বিতর্কে জড়ানোর জন্যও পরিচিত ছিলেন।
২০২০ সালে, কেজরিওয়াল দ্বিতীয়বারের জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি দিল্লির জন্য আরও বেশ কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, যার মধ্যে একটি নতুন শহর তৈরি করা এবং দিল্লিকে বিশ্বের শীর্ষ 10 শহরে পরিণত করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছেন।

কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ

কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মিথ্যাচার, অসততা এবং আইন ভঙ্গ। তাকে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণের জন্যও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
একটি প্রধান অভিযোগ হল কেজরিওয়াল মিথ্যাচারী। তাকে বহুবার ' মিথ্যা ' অথবা ' ভুল ' বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি দাবি করেছিলেন যে তিনি আইআরএস পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন, কিন্তু পরে এটি ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছিল। তিনি দাবি করেছিলেন যে তিনি একটি আইন দৃঢ় করেছেন যা দিল্লির সমস্ত স্কুলে বিনামূল্যে শিক্ষা নিশ্চিত করবে, তবে এই দাবিটিও মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।
কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে অসৎ হওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তাকে কিছু সরকারি চুক্তি প্রদানে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি একটি ক্লাসরুম নির্মাণের জন্য একটি চুক্তি প্রদানের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন, কিন্তু এই চুক্তিটি ন্যায্য হিসাবে গণ্য করা হয় নি। তিনি একটি বাস পরিষেবা প্রদানের জন্য একটি চুক্তি প্রদানের অভিযোগেও অভিযুক্ত হয়েছেন, কিন্তু এই চুক্তিটিও ন্যায্য হিসাবে গণ্য করা হয়নি।
কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের অভিযোগও রয়েছে। তাকে মানহানি এবং অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, তাকে একটি সংবাদপত্রের সাংবাদিককে মানহানি করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি একটি মহিলাকে অপব্যবহার করার অভিযোগেও অভিযুক্ত হয়েছেন।

কেজরিওয়ালের সমর্থকদের দৃষ্টিভঙ্গি

কেজরিওয়ালের সমর্থকরা তাকে একজন সৎ, অক্লান্ত কর্মী এবং সাধারণ মানুষের জন্য লড়াই করা একজন নেতা হিসাবে দেখেন। তারা তার জনপ্রিয়তার ব্যবস্থাগুলির দিকেও ইঙ্গিত করে, যেমন বিদ্যুৎ ও জলের দাম কমানো, সরকারি স্কুলগুলিতে উন্নতিসাধন এবং দিল্লিতে একটি নতুন স্বাস্থ্যসেবা প্রणালী চালু করা।
তারা কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলিও খারিজ করেন, যুক্তি দেন যে এগুলি তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দ্বারা করা হয়েছে। তারা আরও যুক্তি দেন যে কেজরিওয়াল একজন নির্দোষ ব্যক্তি এবং তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ প্রমাণিত হয়নি।

কেজরিওয়ালের সমালোচকদের দৃষ্টিভঙ্গি

কেজরিওয়ালের সমালোচকরা তাকে একজন অযোগ্য, অসৎ এবং বিভক্তিমূলক রাজনীতিবিদ হিসাবে দেখেন। তারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলির দিকেও ইঙ্গিত করে, যুক্তি দেয় যে এগুলি তার দুর্নীতি এবং অসততার প্রমাণ।
তারা কেজরিওয়ালের জনপ্রিয়তার ব্যবস্থাগুলিকেও খারিজ করেন, যুক্তি দেন যে এগুলি শুধুমাত্র ভোট কেনার কৌশল। তারা আরও যুক্তি দেন যে কেজরিওয়াল একজন বিভাজনকারী রাজনীতিবিদ যিনি নিজের রাজনৈতিক উদ্বেগের জন্য দিল্লিকে ভাগ করেছেন।

ভবিষ্যতের জন্য

কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক ভবিষ্যত অনিশ্চিত। তিনি একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলিও রয়েছে। তিনি দিল্লিকে ভালোর দিকে পরিচালিত করতে পারবেন কিনা তা সময়ই বলবে।