আর পুরুষ নাইক নন, দুষ্টের বিরুদ্ধে নারীর শক্তির জয়ের প্রতীক




মহর্ষি বাল্মীকির জন্মদিন। দুষ্টের বিরুদ্ধে নারীর শক্তির জয়ের প্রতীক। সীতার সতীত্ব রক্ষার জন্য বাল্মীকি প্রভুর বদান্যতা। সীতাকে আশ্রয় দেন আর রামকে দেন রামায়ণের মহাকাব্য।

রামায়ণ আর ভাগবতের মতো পবিত্র গ্রন্থের রচয়িতা মহর্ষি বাল্মীকি। যেখানে রয়েছে শ্রীরামচন্দ্র আর রাধাকৃষ্ণের মহিমা।

রামায়ণে রয়েছে রাবণকে হত্যা করে অশোক বাটিকা থেকে সীতাকে উদ্ধারের গল্প।

কিন্তু ভাগবতে রয়েছে রাধার প্রেমে হারিয়ে যাওয়া শ্রীকৃষ্ণ আর সেই প্রেমের খেলা। ভাগবতেই আছে কৃষ্ণের বংশধরদের বিলুপ্তির বর্ণনা। মহাভারত আর মহাভারতের পরে কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া নানান সভ্যতা আর সাম্রাজ্যের কথাও।

সেই সময়টা ছিল অত্যন্ত রক্তাক্ত। যখন হিংসা আর রাগের দাপটে শুরু হয়েছিল উত্তরাধিকারের লড়াই। নিজেদের দুর্বলতা আর অপরাধের গ্লানি ঢাকতে বহুরূপে একের পর এক হত্যা আর তা শেষ হয় না।

কিন্তু, হঠাৎ এই সব হিংস্রতা আর অপরাধের যুগে প্রকৃতির নিয়মে দয়ার আধিক্য দেখা দেয়। নিজেকে দুর্বল আর অপহৃত বলে মনে করে কোন এক যুবক ঘৃণা আর হিংসার জন্ম দেয়। সে নিজের মনের দুর্বলতাকে দায়ী না করে অন্যদের দায়ী করে। আর সেই দায় থেকে মুক্তির জন্য সহিংসতার পথ বেছে নেয়।

যুদ্ধক্ষেত্রে সে হয়ে ওঠে অসুর। তার দায়ের অন্যদের প্রাণের মূল্য দেয়। আর সেই দায় থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সে যুদ্ধে জয়ের পরও হত্যা করে। একের পর এক অপরাধের পথে পা বাড়ায়। আর তার ঘৃণা শেষ হয় না। সেই ঘৃণাকে সে দায়ী করে পুরো সমাজকে আর তার পরে নারীকে। সে মনে করে যে, অপহরণ হওয়ার জন্য নারীই দায়ী। যদি সে নিজের ইচ্ছায় অপহৃত না হতো তাহলে কেউ তাকে অপহরণ করতে পারতো না।

সেই অপহৃত নারী যে কতটা অসহায় আর হীন, কতটা অপমানিত আর ভয়ের মধ্যে বেঁচে থাকে, সেটা কখনও ভাবে না। তার কাছে নারী শুধুমাত্র পুরুষের কামনার বস্তু। তার মন-মানস, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন মূল্যই নেই।

যদি কোন নারী তার ঘৃণার পাত্র হয়, তাহলে সে তার ভয় দেখায়। তার শরীর আর মনের কতটা ক্ষতি করবে তা তাকে বারংবার মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু সেটা তারও শারীরিক আর মানসিক ক্ষতির কারণ। কারণ, অপরাধ করতে গিয়ে সে নিজের মধ্যে দানবকে জাগিয়ে তোলে। সে তার মনুষ্যত্ব হারায়। তার হৃদয় শুধুমাত্র হিংসা আর রাগ দিয়ে ভরে যায়।

তাই, মহর্ষি বাল্মীকি নারীর শক্তির জয়ের গান গেয়েছেন। তিনি নারীকে জানিয়েছেন যে, তারা দুর্বল নয়, তারা শক্তিশালী। তাদের হিংসা আর রাগ দিয়ে দমন করা যাবে না। তারা অপরাধের শিকার হলেও তারা অপরাধী নয়। তারা তাদের নিজেদের শক্তিতে অপরাধীকে হারিয়ে দিতে পারে।

নারীকে তিনি জানিয়েছেন যে, তারা তাদের শরীরের চেয়েও শক্তিশালী। তারা তাদের মনের, তাদের চিন্তার শক্তিতে অপরাধীকে পরাজিত করতে পারে।

আজ মহর্ষি বাল্মীকির জন্মদিনে আমরা নারীর শক্তিকে স্মরণ করি। আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমরা তাদের সাহস আর শক্তির গান গাই।

আজ আমরা প্রতিজ্ঞা করি যে, আমরা নারীর সুরক্ষার জন্য সবসময় সোচ্চার থাকব। আমরা নারীর প্রতি কোনো ধরনের অপরাধ মেনে নেব না। আমরা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করব।

আমরা বিশ্বাস করি যে, একদিন আমাদের দেশে নারী নিরাপদে আর মর্যাদার সঙ্গে বাস করবে।

লেখক সরযূ চৌধুরী পেশায় ডাক্তার, পশুকল্যাণ ও নারী অধিকার বিষয়ে সক্রিয় এবং লেখালেখি করেন