তার মধ্যে রূপার কথা যদি বলি; তাহলে তো পুরোটাই আবেগের ব্যাপার। মিষ্টি মুখ করানো, শুভ কাজে উপহার দেওয়া, ছোটদের খেলনা বানানো, পুজোর থালা-বাসন সাজানো এমন হাজারটা কাজে রূপা লাগে। আবার মেয়েদের মাঝে তো রূপার গয়নার আবেদন অপরিসীম। বলাই বাহুল্য, রূপার বিকল্প হিসেবে কাউকে মানতে দিতে চায় না কন্যাদায়ের বাবা।
কিন্তু সোনার বেলায়? এখানে আরও কিছু কারণ আছে। মানুষের মনে একটি বিশ্বাস শুরু থেকেই জন্মে থাকে যে, সোনা একটি নিরাপদ বিনিয়োগ। যখন অর্থনীতি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে বা মুদ্রাস্ফীতির গ্রাসে মানুষের রোজগার কমতে থাকে; তখন সবাই সোনার দিকে ছুটে যায়। সোনার বিপরীতে বিনিয়োগ করলে অর্থের কোনো ক্ষতি হবে না, বরং সোনার দাম বাড়লে এই বিনিয়োগ বেশ মুনাফাদায়কও হতে পারে।যদিও সোনার মূল্যের উঠা-নামাও কম নয়। তবে তারপরও অন্যান্য বিনিয়োগের তুলনায় সোনা অনেকটাই নিরাপদ। অনেকে আবার দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসেবে সোনাকে বেছে নেন। সন্তানের ভবিষ্যত, বৃদ্ধ বয়সের জীবন-জীবিকা এসব কিছুর নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য সোনা সব সময়ই ভরসার জায়গা দখল করে রেখেছে।
এবার আসি সোনা-রূপার অলংকারের কথায়। সোনা-রূপার অলংকার তো শুধু অলংকার নয়; বরং একটি সামাজিক প্রথা, আবেগের প্রকাশ, স্ট্যাটাস সিম্বল। বিশেষ করে বিবাহের মতো অনুষ্ঠানে সোনার গয়না থাকাটা বাংলাদেশী সমাজের একটা অলিখিত নিয়ম। তবে এখনকার আধুনিক সময়ে এটির প্রয়োজনীয়তা কিছুটা কমেছে বলা যায়।এখন মেয়েরা বিয়েতে কম দামের গয়না পড়তেও রাজী। তাদের কাছে গয়নার আধুনিকতা আর নকশা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সোনা-রূপার অলংকারের বদলে তারা এখন নতুন নতুন নকশার ইমিটেশন বা নকল গয়নাও অনেক বেশি পরছেন। আর এটাতে আবার সুবিধাও হচ্ছে অনেক।
কারণ, সোনা-রূপার গয়নার তুলনায় নকল গয়নার দাম অনেক কম। আবার ডিজাইনও পাওয়া যায় আকর্ষণীয়। এমনকি এখন সোনার কারিগররাও গয়নার আধুনিক নকশায় কাজ করতে শুরু করেছেন। ফলে সোনার গয়নার মতোই দেখতে নকল গয়না পাওয়া যাচ্ছে; আর দাম পড়ছে অনেক কম।তাই যারা সোনা-রূপার গয়না কেনার সামর্থ্য রাখেন না; তারা আজকাল নকল গয়নাকেই বেছে নিচ্ছেন। তবে সব মিলিয়ে দেখা যায়, সোনা-রূপার আবেদন হাজার বছর ধরে মানুষের মনে সুদৃঢ়ভাবেই বিদ্যমান। এখন এর কিছুটা রূপের পরিবর্তন হয়েছে শুধু।
কিন্তু সোনা-রূপার জনপ্রিয়তার মূলে যে আবেগ লুকিয়ে ছিল; তা এখনো জিইয়ে আছে। আর এই আবেগের টানেই হয়তো সোনা-রূপার মূল্য এতোটা উঁচুতেই থাকবে। কারণ, আবেগের ব্যাপারে তো মানুষের কোনো হিসেব-নিকেশ থাকে না!