আর স্যাত দিন পর আবার ক্রিকেট ম্যাচ
আর সাত দিন পর 2 মার্চ। এদিন এশিয়া কাপের ফাইনাল। ভারত বনাম পাকিস্তান। আগে থেকেই কলকাতা থেকে দিল্লি থেকে সব জায়গায় টিকিট বিক্রি কষাকষি। কিন্তু পাওয়া দায় অসম্ভব। কালোবাজারে ২০ হাজার টাকাও দিয়ে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ ছুটি নিয়ে দুবাই যাচ্ছেন। কেউ কেউ ভারতীয় দূতাবাসে কিছু একটা ব্যবস্থা করে ফেলেছে।
আমি আর একদল বন্ধু ভাবছিলাম একসাথে ম্যাচটা দেখব। কিন্তু লাভ হল না। কারণ, আমার এক বন্ধু মনে করিয়ে দিল, 2 মার্চ আমাদের বিবাহবার্ষিকী। আর সব বন্ধুরাই নিজের নিজের বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রীদের সাথে সময় কাটাতে চায়। অতএব আমাদের সপ্ন ভেস্তে গেল। আর আমাদের আশাও ভেস্তে গেল।
আমাদের দেশে ক্রিকেট খুব বেশি দেখা হয়। প্রায় সব বাড়িতেই লিভিং রুমে টেলিভিশন থাকে। টেলিভিশনে মূলত খবর-ক্রিকেট আর সিনেমা দেখা হয়। এছাড়া সকাল-বিকেলে রান্না ও মেয়েদের ধারাবাহিকও দেখা হয়। আর কখনও কখনও মেয়েরা হিন্দি অথবা বাংলা সিরিয়াল দেখে। মেয়েদের ফেভারিট সিরিয়াল হল - মহাভারত অথবা রামায়ণ। আর ছেলেরা তাদের একাধিকবার দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে গেছে। অতএব রাতে ছেলেরা মূলত ক্রিকেটই দেখে।
ক্রিকেটে আবার ইনিংস থাকে। প্রত্যেক ইনিংসে দুটি অংশ থাকে। একটা ব্যাটিং আর একটা বোলিং। প্রথমে এক দল ব্যাট করে আর বিরোধী দল বোলিং করে। তারপর আবার বিপরীতটা হয়। প্রতিটি ইনিংসের একটি নির্দিষ্ট সময় বা ওভার থাকে। একটি ওভারে ষষ্ঠ অর্থাৎ ছ'টি বল থাকে। আর আম্পায়ারের সংকেত পেয়ে বোলার বোলিং করে। তারপর ব্যাটসম্যান ব্যাট দিয়ে বলে আঘাত করে আর রান তোলে। আর আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যা বলবেন তাই-ই চূড়ান্ত ফায়সালা।
আসলে আমাদের দেশে ক্রিকেট খুবই জনপ্রিয়। আমি যখন ছেলেবেলায় ছিলাম তখন ক্রিকেটারদেরকে ঈশ্বর হিসাবে মানুষ দেখতো। পত্রিকা আর ম্যাগাজিনে খেলোয়াড়দের বিভিন্ন ছবি বেরোতো। সারা দেশের মানুষ ঈশ্বরের মতো করে দু'চোখ মেলে তাদের ছবি দেখতো। ওদের ছবি কেটে বাসায় টাঙিয়ে রাখতো। এমনকি তাদের ফটো সংগ্রহ করার জন্য মানুষ হুড়োহুড়ি করতো। আমার বড় দাদা এমনই একজন ভক্ত।
আমি যখন ছয় কি সাত বছর বয়সী তখন একদিন আমার বড় দাদা তার বসের অফিসে গিয়ে বিখ্যাত ক্রিকেটার কপিল দেবের সঙ্গে ভেট করেন। আর কপিল দেব তাকে তার স্বাক্ষর করা একটি ব্যাট উপহার দেন। আমার দাদা সেই ব্যাট আজও তার বাসার ড্রয়ারে সযত্নে তুলে রেখেছেন।
এখনও মনে আছে, দাদা তার কারখানায় যখন পুরনো কাগজ আর বই ষাঁড়তো তখন তার মনের মধ্যে শুধু একটাই কথা ঘুরপাক খেতো - ক্রিকেট। এমনকি ক্রিকেটকে নিয়েই দাদা তার প্রেমিকার সাথে দেখা করতো। হ্যাঁ, সত্যি। দাদার স্ত্রীর সাথে তার প্রেমের সূত্রপাত ঘটেছিল ক্রিকেট মাঠে। দাদার স্ত্রীও আমার বড় দাদাকে ক্রিকেট দেখার সময় দেখেছিলেন। আজও তারা দু'জনেই প্রেমিক-প্রেমিকা।
আমাদের দেশের লোকেরা কতটা ক্রিকেট নিয়ে দিওয়ানা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখনও আমার মনে আছে, কয়েক বছর আগে আমি আর দাদা আমাদের বাড়ির সামনে বসে ক্রিকেট খেলা দেখছিলাম। হঠাৎই আমি একটা দুর্দান্ত ক্যাচ ধরলাম। দাদা আমাকে প্রশংসা করলেন আর বললেন, "তুই ভবিষ্যতে ভালো ক্রিকেটার হবি।"
আমার দাদার কথা শুনে আমার খুব ভালো লাগছিল। আমি যখন বড় হবো ভালো ক্রিকেটার হয়ে আমার দাদার মতো করে সব মানুষের মনে জায়গা করব। আমার মনে ছিল, ক্রিকেটার হয়ে আমি সব মানুষের মনে জায়গা করব।
আজ আমি বড় হয়ে গেছি। কিন্তু এখন আর ক্রিকেটার হতে পারি না। আমি ছোটবেলায় অনেক বেশি মোটা ছিলাম। তাই আমার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পুরণ হয়নি। ক্রিকেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমি লিখলাম। আজ আমি একজন সফল ক্রীড়া সাংবাদিক। আর সময় সত্যি খুব দ্রুত কেটে যায়।