আশুতোষ শর্মা




গতকাল সন্ধ্যায় আশুতোষ শর্মার সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়েছে। বহুদিন পর দেখা হয়েছে। উনি অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত ছিলেন। সবকিছু নিয়েই খুব মজা করে আলোচনা করছিলেন। পুরনো দিনের কথা মনে করছিলেন। তবে একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি। তাঁর মুখে হাসি থাকলেও চোখে একটা অস্বস্তি লুকিয়ে রয়েছে।

সহজেই বুঝলাম, তিনি কিছু বলতে চায়। প্রথমে নিজের আনন্দগুলো বললেন। জানলাম, ভালোই আছেন। কাজকর্ম ভালো চলছে। সংসারেও কোনো অভাব নেই। সবকিছু সুন্দরভাবেই চলছে। কিন্তু সেই হাসির আড়ালে লুকানো চোখের অস্বস্তিগুলোই বার বার আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। শেষে সাহস করে তাঁকে বললাম, আপনার কিছু বলার আছে, বলুন।

তখন তিনি বললেন, তোমাকেই বলব ভেবেছিলাম আগেই। আসলে আমি অনেকদিন ধরেই একটা জিনিস নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।

আমি মনোযোগ দিলাম তিনি কী বলেন। তিনি বললেন, তুমি জানো আমার একটা ছেলে আছে। সে এখন বড় হয়েছে। ওরও বউ হয়েছে। নাতিও হয়েছে। আসলে আমাদের পরিবারটা ছোট। আর এই বিশাল পৃথিবীতে আমাদের কেউ নেই। আমি আর আমার স্ত্রী। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি আমার ছেলেটা কি আমার মতো একা থাকবে। যখন আমি আর আমার স্ত্রী থাকব না, তখন ওর পাশে কে থাকবে। আমরা চলে গেলে ও কী ভাবে থাকবে? কী ভাবে নিজেকে সামলাবে।

তিনি কথা বলতে বলতেই আমার চোখে জল চলে এল। আমিও তাঁকে বললাম, আমারও এই ভয় হয়। আমাদেরও পরিবারটা ছোট। আর কেউ নেই। আমরা চলে গেলে কে দেখবে আমাদেরকে। আমি হয়তো এখন সবার সঙ্গে ভালোবাসা টুকরো টুকরো করে ভাগ করে নিচ্ছি। কিন্তু একদিন হয়তো এই ভাগাভাগি করারও কেউ থাকবে না। হয়তো তখন আমাদের পাশে কাউকে দেখতে পাব না। দাঁড়িয়ে থাকারও জায়গা হয়তো পাব না।

তিনি আমার কথা শুনে বললেন, তাই তো। তোমারও তাই মনে হয়। তোমার জন্যই আজ তোমাকে এসব বললাম। আমি চাই না আমার ছেলেটা একদিন এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ুক। তাই আমি ভাবছিলাম আমার সম্পত্তি যা কিছু আছে চার ভাগ করে দেব। একভাগ নিজেদের রেখে বাকি তিনভাগ আমার ছেলে আর দুই মেয়েকে দিয়ে দেব। ওরা নিজেরাই তাদের সংসার ভালো রাখবে।

আমি তাঁর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। বললাম, আপনি ভুল বলছেন। আপনার সম্পত্তির কিছু অপেক্ষা আপনার পাশে একজন যদি থাকে তাহলে সেটাই অনেক বড় সম্পত্তি। আমাদের দরকার ভালোবাসা। দরকার সঙ্গ। আর আপনি এখন যা বলছেন তাতে আপনার ছেলেদের পরিবার যদি আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যায় তাহলে কেমন হবে? আপনার মতো আমারও একটাই উপদেশ।

ছেলেমেয়ে যতই বড় হোক না কেন বা যতই স্বাবলম্বী হোক না কেন মা-বাবার পাশে থাকাটাই তার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার। তাঁদের আদর ভালোবাসা কিছুই তার পক্ষে ভুলতে সম্ভব নয়। আর মা-বাবার জন্য তাদের সন্তান হল সবচেয়ে বড় সম্পত্তি। যদি মা-বাবার পাশে তাদের সন্তান থাকে তাহলে আর কোনো সম্পত্তির প্রয়োজন হয় না।