আড়াই কিমি ছুটে সমুদ্রে মিলিত হয়েছে রণদীপ হুডা!




একটা জিনিস অনেকদিন ধরেই লক্ষ্য করছি। আমার চারপাশের অনেক মানুষই মনে করে আমি খুব ব্যায়াম করি। ভুল! সিলেবাসের বেশিরভাগই আমি ঘুমিয়ে উত্তীর্ণ হই। ঘুমের সঙ্গে খুব ভালোবাসা। যেদিন সত্যি সত্যি ব্যায়াম করার ইচ্ছা হয়, সেদিনই আমি স্ত্রীকে নিয়ে ফ্রিজ থেকে বরফ বের করি। তারপর, স্ত্রী ফ্রিজের দরজাটা বন্ধ করতে ভুলে গেলে আমি আধ ঘন্টা হাঁসফাঁস করি ফ্রিজ ঠান্ডা রাখতে। এটাই আমার ব্যায়ামের রুটিন!

কিন্তু, কাঁধে বন্দুক নিয়ে কিংবা ঘোড়ায় চড়ে, চোখে-মুখে বীরত্ব নিয়ে যখন আমাকে স্ক্রিনে দেখা যায়, তখন কিন্তু দর্শক তো আর আমার এই মোটা তলপেটের কথা ভাবে না! আমার মনে হয় আমাদের মধ্যে কেউই ভাবে না যে, পর্দার পেছনের সেই সুদর্শন বীরটি আসলে ঘরে ফিরে এসে বেডরুমের দরজা খুলতে গেলে কাঁধেই হাঁপিয়ে ওঠে!

আমার তো মনে হয় আমার ব্যায়ামের প্রতি এই অনীহার কারণটা খুব স্পষ্ট। একটা সময় আমার বোধ হয় দৌড়তে খুব ভালোবাসতাম। এমনকি ৫০০ মিটার দৌড়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম এসেছিলাম। কিন্তু তারপর হঠাৎ একদিন স্থানীয় বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে দৌড়তে বের হয়েছিলাম। ধুলোবালি আর ঘামে এমন অবস্থা তখন আমার যে, স্কুলের মেয়েরা আমাকে মনে হয়েছিল ফুটবল!
সেইদিন, আর কখনোই দৌড়িনি।

সেই থেকে ব্যায়াম করতে গেলেই এই অপমানজনক ঘটনাটা মনে পড়ে যায় বলে আর দৌড়তে ইচ্ছা হয় না। আর আমার কাছে এটাই যথেষ্ট কারণ দৌড়ানো বাদ দিতে।
কিন্তু, যতদিন যাচ্ছে আমার হাল বদল হচ্ছে। হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন। আমিও বদলে যাচ্ছি। হয়তো বয়সের কারণ, আর হয়তো স্ত্রীর কথা শুনে। আর তাই এই গ্যাস্ট্রোনমিকেল বিষাক্ততা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কিছু ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।

এরকম আড়াই কিমি ছুটে সময়ের রাস্তায় ঘুমিয়ে পড়া এক সেনাবাহিনীকে পুনরায় সুস্থ করে তোলার জন্য সম্প্রতি এক অ্যাডভেঞ্চার ট্রিপে গেলাম। সত্যি বলতে কি, আড়াই কিমি ছোট কিছু নয়। আর যখন আপনি সারাদিন ব্যাগ বহন করে, ঘন জঙ্গল পেরোন, গাছের গুঁড়ির উপর লাফিয়ে চলেন, আর কখনো গভীর জলাশয়ে ডুবে যাবার ভয়ে নিঃশ্বাস রুখে দাঁড়িয়ে থাকেন, তখন আপনার পায়ের পাতা ব্যাথা করে, আর আপনার কাঁধে ব্যাথা হতে থাকে।

আমি আর আমার সহযোদ্ধারা গাছপালার মধ্যে দিয়ে এই পথ পাড়ি দিয়েছিলাম, আর আমার দেহের প্রতিটি পেশী এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আস্তে আস্তে অসাড় হয়ে আসছিল। তখন হঠাৎ দেখি, আমরা সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সুন্দর দৃশ্য আমি কখনো দেখিনি।
সমুদ্রের বিস্তীর্ণ বিস্তার আমার সামনে ছড়িয়ে পড়েছিল, আর সূর্য ডুবতে শুরু করেছিল।

তখনই বুঝলাম, আমার পুরো জীবনই এই আড়াই কিমি যাত্রার মতো। কখনো ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে, কখনো গভীর জলাশয়ে, আমার আড়াই কিমি ছুটে যেতে হয়েছে। কিন্তু যখন আমি যাত্রার শেষে পৌঁছেছি, তখন দেখেছি সমুদ্রের বিস্তীর্ণ বিস্তার আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আর যখন সূর্যটি ডুবে গেল, তখন বুঝলাম যে এটি আমার জীবনের একটি ভিন্ন অধ্যায়ের শেষ। আর এই নতুন অধ্যায়ে আবার আমাকে আড়াই কিমি ছুটতে হবে, নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।

এই আড়াই কিমি যাত্রা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। শিখিয়েছে যে, জীবন যত কঠিন হোক না কেন, আমাদের ছুটে যেতে হবে। আমাদের অস্বস্তিকর পথের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, আর সবচেয়ে কঠিন সময়েও আমাদের সাহসী হতে হবে। আর যখন আমরা শেষে পৌঁছব, তখন আমরা দেখব যে অনেক সুন্দর কিছু আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

তাই, চলুন আজ থেকেই আমরা আড়াই কিমি ছুটতে শুরু করি। আমাদের জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হই। কারণ আমরা জানি যে শেষে সমুদ্রের বিস্তীর্ণ বিস্তার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আর সেখানে সূর্য ডুববে, আর আমরা জানব যে আমরা আমাদের যাত্রার শেষে পৌঁছেছি।
আর সেই মুহূর্তে, আমরা নিজেদের কাছে গর্বিত হব।