ইডেন গার্ডেনস
এক সময় এটি কলকাতার অভিজাত স্ট্র্যান্ড রোডের সঙ্গে রেসকোর্স ময়দানের দক্ষিণে ঢালু জলাশয় ছিল। সেন্ট এডেন নামক ক্যাপ্টেন নেলসনের পুত্রের নামানুসারে এই নামকরণ। এটি ছিল মূলত বেঙ্গল ক্লাবের সদস্যদের জন্য তৈরি একটি উদ্যান। অদূর ভবিষ্যতে এই মাঠ ক্রিকেটের দুনিয়ায় এক নতুন ইতিহাস রচনা করবে কে জানত?
১৮৬৪ সালে জনসাধারণের জন্য ইডেন গার্ডেনসের দরজা খুলে দেওয়া হয়। কলকাতার অভিজাতদের এই আড্ডার জায়গাটি তখন থেকে একটি পিকনিক স্পট এবং সামাজিক মেলায় পরিণত হয়। বেঙ্গল ক্লাব কিছুকাল পরেই ময়দানের দক্ষিণ অংশে ফুটবল খেলার জন্য একটি মাঠ তৈরি করে। পরবর্তীকালে, ল্যার্ড কার্জন বেঙ্গল ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক হন এবং তাঁরই নির্দেশে সমগ্র ইডেন গার্ডেনসকে বর্তমান আকারে সাজানো হয়। লর্ড কার্জন একটি ক্রিকেট মাঠ তৈরির নির্দেশ দেন এবং ১৯০১ সালে ইডেন গার্ডেনসের স্টেডিয়াম তৈরি হয়। সেই মাঠে ১৯৩৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।
ক্রিকেট ইতিহাসের একাধিক স্মরণীয় ম্যাচের সাক্ষী এটি। এখানেই ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত জয় ছিল, যেখানে ডেভিড বুন তার অবিস্মরণীয় ইনিংসটি খেলেছিলেন। এখানেই ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়সূর্য তার বিখ্যাত ২৫৪ রান করেছিলেন। এখানেই ২০১৬ সালে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে বিরাট কোহলি তার প্রথম টেস্ট ডাবল শতরান করেছিলেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭৮ সালে, যখন ইডেন গার্ডেন্সের অস্ট্রেলিয়া-পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ম্যাচের পরের দিন রিংকু দত্ত adficbc মেরেছিলেন। সেই ঘটনার ফলেই পুরো মাঠটি পরে বেড়াদায়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
বর্তমানে ইডেন গার্ডেনস ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলির মধ্যে অন্যতম। ক্রিকেট ছাড়াও এখানে অন্যান্য খেলাও হয়, যেমন ফুটবলের আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবং ইন্ডিয়ান সুপার লিগ ইত্যাদি। কিন্তু এই মাঠের খ্যাতি ক্রিকেটকে ঘিরেই। ক্রিকেট বিশ্বের কাছে ইডেন গার্ডেনস আরও আদরণীয় হয়ে উঠেছে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারত-নিউজিল্যান্ডের ম্যাচের কারণে। সেই ম্যাচে বিরাট কোহলির অর্ধশতক বলে ভারত ফাইনালে উঠেছিল।
ইডেন গার্ডেনস ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গে ক্রিকেটের প্রতি জনপ্রিয়তার সবচেয়ে বড় প্রতীক। এই মাঠের নাম শুনলেই মনে পড়ে যায় ক্রিকেটের কিংবদন্তীদের অবিস্মরণীয় ইনিংসগুলি, রোমাঞ্চকর ম্যাচগুলি, দর্শকদের উল্লাস এবং জয়ের আনন্দ। কলকাতাবাসীকেই বলতে হয়, তারা কতটা গর্বিত এই ইডেন গার্ডেনসকে নিয়ে।