ইরান-ইসরাইল: এক অবিচ্ছেদ্য ঘটনার ইতিহাস




মানব ইতিহাসে দুটি জাতির মধ্যে ইরান এবং ইসরাইলের ঘটনাবলি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য এবং জটিল। এই দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাতের ইতিহাস রয়েছে, যা শতাব্দী ধরে চলে আসছে। ইরান-ইসরাইলের এই ঘটনার ইতিহাস একটি আকর্ষণীয় অধ্যায়, যা অতীতের ভুল এবং বর্তমানের শিক্ষা দুটোকেই প্রতিফলিত করে।
প্রাচীনকাল থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত
ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে প্রথম সহযোগিতা প্রায় 2,500 বছর আগে শুরু হয়েছিল, যখন পারস্য সাম্রাজ্য ইসরায়েলিদের ব্যাবিলনীয় বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিয়েছিল। তবে, এই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় নি, এবং সাম্রাজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে পরবর্তীতে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
মধ্যযুগে, মুসলিম সাম্রাজ্যের অধীনে ইরান এবং ইসরাইলের মধ্যে সীমিত যোগাযোগ ছিল। যদিও ইসরাইলীরা মুসলিম শাসনের অধীনে ছিল, তারা তুলনামূলকভাবে স্বায়ত্তশাসিত ছিল এবং তাদের নিজস্ব আইন ও সংস্কৃতি অনুশীলন করতে সক্ষম ছিল।
আধুনিক যুগ
1948 সালে ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই ইরান-ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ইরান নতুন ইহুদি রাষ্ট্রের দৃঢ় বিরোধী ছিল এবং এর স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। এই অস্বীকৃতি দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শত্রুতার সূচনা করে।
1950 এবং 1960 এর দশকে ইরান এবং ইসরাইল উভয়ই সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। তবে, আঞ্চলিক বিষয়গুলি নিয়ে দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ইরান পারস্য উপসাগরের উপর নিয়ন্ত্রণ চাইছিল, যা ইসরাইল একটি হুমকি হিসাবে দেখেছিল।
1973 সালে ইরানের শাহ রেজা পাহলভি এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেইরের মধ্যে তেহরানের একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকটি ইরান-ইসরাইলের সম্পর্ককে উন্নত করার একটি প্রচেষ্টা ছিল, তবে এটি কখনও সম্পূর্ণরূপে সফল হয় নি।
ইরানী বিপ্লব এবং তার প্রভাব
1979 সালে ইরানী বিপ্লব ইরান-ইসরাইলের সম্পর্ককে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে। বিপ্লবী নেতা আয়াতুল্লাহ রুহোল্লাহ খোমেনি ইসরাইলকে ইরানের "প্রধান শত্রু" ঘোষণা করেন এবং দেশটির ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি দেন। ইসরাইল অকুপাইড গোলান হাইটস থেকে সরে আসতে অস্বীকার করার পর, 1980 সালে ইরান এবং ইসরাইল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।
ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় (1980-1988), ইরান এবং ইসরাইল উভয়ই পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল। ইরান ইরাকি সেনাদের সহায়তা করেছিল, যখন ইসরাইল ইরানকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। যুদ্ধের ফলে দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে গিয়েছিল।
যুদ্ধোত্তর যুগে, ইরান এবং ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। ইরান ইসরাইলকে পারমাণবিক হুমকিরূপে দেখে, যখন ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন। দুটি দেশ সিরিয়া এবং লেবাননে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধও পরিচালনা করেছে।
বর্তমান অবস্থা
বর্তমান অবস্থায়, ইরান এবং ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। ইরান ইসরাইলকে "অবৈধ রাষ্ট্র" হিসাবে দেখে চলেছে এবং দেশটির ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন এবং দেশটিকে "অস্তিত্বের হুমকি" হিসাবে দেখে।
দুটি দেশের মধ্যে বিরোধ সমাধানের কোন সহজ উপায় নেই। তবে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য উভয় পক্ষেরই যোগাযোগের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
ইরান এবং ইসরাইলের মধ্যে ঘটনার ইতিহাস একটি জটিল এবং অনিশ্চিত tương laiর দিকে ইঙ্গিত করে। দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য উভয় পক্ষেরই যোগাযোগের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।