ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তান: ঠান্ডা মাথার এক যুদ্ধ৷




আগ্রহের অভাব এখন বড় কিছু৷ ক্রিকেটের প্রতি আমাদের আগ্রহ আজ যেখানে দাঁড়িয়েছে, সেখান থেকে বিরাট এক প্রান্তর অতিক্রম করতে হবে৷ যুগ বদলের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেটেও বদল এসেছে৷ আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে টি-টোয়েন্টিই হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রিকেট৷ গতকালকে টিভিতে দীর্ঘক্ষণ হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে চলা টেস্ট ম্যাচ দেখার রীতি আজ আর নেই৷ কদাচিৎ কোনো টিভি চ্যানেল ক্রিকেট দেখায় আর৷ ক্রিকেটের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে৷ চারদিকে এখন ফুটবলের উৎসব৷
গত কিছু বছরে ইংল্যান্ড-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়েও একটা অদ্ভুত উদাসীনতা চেপে বসেছে৷ উল্টোদিকে দীর্ঘদিন আগে একটা সময় ছিল, যখন ইংল্যান্ড-পাকিস্তান ম্যাচ বলে বোঝাত যে, কিছুটা সময়ের জন্যে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করা হয়েছে৷ আজ আর সেই দিন নেই৷
ক্রিকেটের ময়দানে শেষ বারের মতো যুদ্ধ ঘোষণা হয়েছিল ২০১৬ সালে৷ সালটা এখানে শুধু সময়ের হিসাব নয়, একটা প্রতীকও৷ এরই দু’দিন পর দুটি সন্ত্রাসবাদী দ্বারা হত্যা করা হয় ঢাকার হোলি আর্টিজান ক্যাফের বিশ জন নিরীহ মানুষকে৷
সেই সময় ইংল্যান্ড এসেছিল পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ খেলতে৷ দ্বিতীয় টেস্ট চলাকালীনই সন্ত্রাসবাদের ওই ঘটনা ঘটে৷
ইংলিশ খেলোয়াড়রা দেশে না ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়, অথচ সেই মুহূর্তে পাকিস্তানটা কিভাবে অপরাধবোধের সঙ্গে লড়ছে, তা কেউ জানে না৷ পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ নিয়ে যখনই দেশটি যুদ্ধ ঘোষণা করে, তখনই সারা দেশটাকে অমানুষের চেহারা দেওয়া হয়৷
সেই দিন দেশের বড় একটা অংশ এ কথাটা বুঝেছিল, ইংলিশ খেলোয়াড়রা চলে গিয়েছে, কিন্তু তাদের ভেতরে যে কতটা কষ্ট ছিল, তা তাদের মনে হলে আজকেও কান্না আসে৷
এই আট বছরে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড ম্যাচ আর আগের মতো উল্লাস আর উত্তেজনার উৎস নয়৷ কারণের কথা বলা ভালো নয়, এই যুদ্ধে কে জিতেছে আর কে হেরেছে৷
যেদিন হোলি আর্টিজানে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, সেদিন ঠিক দু’বছর পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম শহর কোয়েটার একটি হাসপাতালে পুলিশের উপর হামলা চালানো হয়৷ সেখানকার জরুরি বিভাগে ৭০টি দেহ গোনা হয়েছিল, যার মধ্যে বেশির ভাগই ছিল পুলিশ।
সেই দিন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ মাঝপথে শেষ করে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান৷ যুদ্ধের ময়দানে ইংল্যান্ডের সঙ্গে এক দফাও আক্রমণ করা হয়নি৷ ২০১৬ সাল থেকে তারা আর পাকিস্তানে কোনো টেস্ট সিরিজে অংশ নেয়নি৷
এবারও একটা সম্ভাবনা ছিল যে, ইংল্যান্ড আসবে পাকিস্তানে, কিন্তু পরে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় তারা পাকিস্তানে না আসার কথা জানায়৷
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড রীতিমতো ঘোষণা করে দিয়েছে, ইংল্যান্ডের সঙ্গে তাদের সিরিজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে হবে৷ পাকিস্তানের জন্যে এটা একটা বড় ধাক্কা৷ দেশে ক্রিকেট বোর্ডের হাল বেশ খারাপ৷ সর্বাধিক প্রভাবশালী দল থাকা সত্ত্বেও ক্রিকেটের আয় কমে যাওয়ায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের অবস্থা বেহাল৷
যে দেশ ক্রিকেটে তার নিজস্ব শক্তির জোরেই বড় হয়েছে, সেই দেশের জন্যে এটা একটা বড় ধাক্কা৷
পাকিস্তান এতদিন ভাবত, তার কাছে একটা শক্তি আছে, এবার সেই শক্তিটাকে অস্বীকার করা হচ্ছে৷
এবারের ইংল্যান্ডের সফর বাতিল হওয়ার কারণে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার৷ এত দিন পাকিস্তান দল তাইওয়ান, কেনিয়া, বাংলাদেশের মতো ছোট দলের সঙ্গে তাদের দেশে সিরিজ খেলে সন্তোষ নিয়েছিল৷
এবার ইংল্যান্ডের সঙ্গে একটা আশা জাগায় এমন সিরিজও বাতিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি হবে ব্যাপক৷
যে দেশে ক্রিকেটকে নিয়ে বেড়ে ওঠা একটা পুরো প্রজন্ম, তাদের কাছে এটা একটা বিশাল ধাক্কা৷ শুধু কি পাকিস্তানিরাই ক্রিকেট নিয়ে বেড়ে উঠছে! ইংলিশদেরও তো খুব ভালোবাসে ক্রিকেট৷ শূন্য স্কোরের খেলাটা কতটা রোমাঞ্চকর, সেটা কে আর বলবে তাদের?
যেদিন সুইডেন দল পাকিস্তানে খেলতে এসেছিল, সেদিন দেশের জনগণ এতই খুশি হয়েছিল যে, স্যোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্ছ্বাস নিয়ে লিখেছিল, ‘এখন আমার মন শান্তি পেল৷’ সুইডিশরা এসেছিল দুটো টি-টোয়েন্টি খেলতে, কিন্তু পাকিস্তানিদের কাছে বোধ হয়েছিল, যেন তারা জয় করল বিশ্বকাপ৷
সত্যিই তো! যুদ্ধের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন এত মৃত্যু হচ্ছে যে, লোকেরা আশাটুক