ঈশ্বরের দান, অভিশাপ নয়




আমি বেশ কয়েক বছর ধরে লিখছি। বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছি। কখনো কখনো অমন কিছু বিষয়ে লিখতে হয়েছে, যা আমি চাইনি। কিন্তু সময়ের বিধান কি আর কখনো ফেরা যায়? আর ফেরানোর কথা তো দূরে রহিলো, ভুলে যাওয়াও যায় না। আর ভুলে গেলেও কি ক্ষমা করা যায়? কিছু কিছু গল্প কেবল মনে রাখা হয়। তাদের শিক্ষা হিসেবে মনে রাখা হয়। আর কখনো কখনো অভিশাপ হিসেবেও মনে রাখা হয়।
আমি ছোটবেলায় অসম্ভব রকমের সুন্দরী ছিলাম। মায়ের কোল থেকে নামতেই সবার নজর আমার উপর। সবার কাছে শুনতাম, "আহা কত সুন্দর!" এমনকি দেখামাত্র অনেক অপরিচিত মানুষও আমাকে কোলে তুলে নিত। এটা শুধুমাত্র আমার বাড়িতে বা পরিচিত মানুষদের কাছেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আমি যেখানেই যেতাম, সেখানেই আমার রূপের কথা শুনতাম। আর এই একবার শুনলেই শেষ নয়। সেটাই ছিল বিষয়টা।
প্রতিটি অনুষ্ঠানে আমাকে সবার সামনে বসিয়ে রাখা হতো। আত্মীয়-স্বজন এমনকি অতিথিরাও আমার সামনে এসে আমার রূপের প্রশংসা করে যেতো। আমার মনে হতো, এটাই আমার পরিচয়। আমি সুন্দরী আর এই কারণে সবাই আমাকে পছন্দ করে।
আমি যত বড় হতে লাগলাম, ততই আমার রূপ নিয়ে আমার মাথায় উঠতে লাগলো। আমি মনে মনে ভাবতাম, আমার রূপের কারণেই সবাই আমাকে ভালোবাসে। আমি বিশেষ একজন। কিন্তু সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয়টি হলো, আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম, রূপ ছাড়া আমি আর কিছুই না।
এই বিশ্বাসটা আমাকে নিয়ে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। আমি ভাবতাম, আমি যদি সুন্দর না হই, তাহলে আমি কেউ না। এমনকি আমি ভাবতাম, আমার অন্য কিছু কাজ করার দরকার নেই। আমার শুধুমাত্র সুন্দর হতে হবে।
এই বিশ্বাসের কারণে আমি আমার পড়াশোনায় খুব একটা গুরুত্ব দিতাম না। আমি মনে করতাম, আমার সুন্দর হওয়াই যথেষ্ট। আর আমার সুন্দর রূপের জন্য আমি কষ্ট করে পড়াশোনা করার দরকার নেই।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমার রূপ ফিকে হতে শুরু করলো। আমার ত্বকের আভাটা চলে গেল, আমার চোখের আলোটা কমে গেল। আর আমার চুলগুলোও আর আগের মতো ঘন আর কালো রইল না।
আমি যখন এই পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করলাম, তখন আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি ভাবলাম, আমার রূপ যদি চলে যায়, তাহলে আমি কেউই থাকবো না। আমি ভাবলাম, সবাই আমাকে ত্যাগ করে চলে যাবে।
আমি আমার রূপ ফিরে পেতে হাজারো উপায় খুঁজলাম। আমি বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্য পণ্য ব্যবহার করলাম। আমি এমনকি সার্জারি করার কথাও ভেবেছিলাম। কিন্তু কিছুই কাজ করলো না।
আমার রূপ ফিরে পেতে ব্যর্থ হওয়ার পর, আমি হতাশায় সবকিছু ছেড়ে দিলাম। আমি আমার কাজ ছেড়ে দিলাম। আমি আমার বন্ধুদের সাথে আর দেখা করলাম না। আমি এমনকি আমার বাড়ি থেকেও বের হতাম না।
আমি নিজেকে একটি ঘরে আটকে রেখেছিলাম। আমি অন্ধকারে বসে থাকতাম এবং আমার হারানো রূপের জন্য কাঁদতাম। আমি মনে করতাম, আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে।
কিন্তু একদিন, আমি একটি দর্পণে আমার প্রতিচ্ছবি দেখেছিলাম। আর সেদিন আমার চোখে আমার রূপের কারণে আমি কীভাবে নিজেকে ধ্বংস করেছি তা দেখতে পেয়েছিলাম।
আমি আমার কোন রূপ ফিরে পাবো না। কিন্তু আমি আমার জীবন ফিরে পেতে পারি। আমি আমার পড়াশোনায় ফিরে আসতে পারি। আমি আমার কাজে ফিরে আসতে পারি। আমি আমার বন্ধুদের সাথে ফিরে আসতে পারি।
আমি জানি এটা সহজ হবে না। কিন্তু আমি চেষ্টা করব। আমি আমার জীবন ফিরে পাবো।
আর আমি আর কখনোই আমার রূপকে আমার পরিচয় হিসেবে দেখবো না। আমি আমার রূপের জন্য নয়, আমার কাজের জন্য, আমার বন্ধুদের জন্য এবং আমার জীবনের জন্য স্মরণে রাখা হতে চাই।