ঈদ আল-ফিতরের ঠিক তਿੰন মাস পরই মুসলমানরা আনন্দ উদযাপন করেন আরেকটি উল্লাসময় ঈদ হিসেবে, দিনটি যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর জন্মদিন এবং বিশ্বব্যাপী ঈদ-উল-মিলাদ-উন-নবী হিসেবে উদযাপিত হয়৷ তবে, ভারতবর্ষে এটি ঈদ মিলাদ-উন-নবী বা মিলাদ-উন-নবী নামেই পরিচিত।
ইসলামি বিশ্বাসমতে, মুসলিম নবী মুহাম্মদ (সাঃ) রাবীউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ তিনি নিজের এই জন্মদিনকে একটি উৎসবের মতো উদযাপন করতেন না, কিন্তু সেদিন কোনো নতুন কাজ শুরু করতেন। এই দিনটির গুরুত্ব অতীতেও ছিল, তবে ভারতের প্রশাসনিক কাজে এটি খুব বেশি গুরুত্ব পায় হায়দরাবাদ অঞ্চলে নিজামদের শাসনকালে।
নিজামদের রাজত্বকালে, এই দিনটি একটি রাষ্ট্রীয় উৎসবে পরিণত হয়। জলসা-ই-মিলাদ নামে একটি বিশাল উৎসবের আয়োজন করা হত যেখানে শহর জুড়ে নতুন লাঠি, বর্ণিল ঝাণ্ডা এবং বিভিন্ন রকমের জলসায় শোভাযাত্রা করা হতো। এই উৎসবটি শুধুমাত্র মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এর পাশাপাশি, হিন্দুরাও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন, যা ভারতের গঙ্গা-জমুনি সংস্কৃতি এবং ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ৷
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর, ঈদ-মিলাদ-উন-নবী একটি সরকারি ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এই উৎসবটি দেশব্যাপী সকল মুসলমান দ্বারা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালন করা হয়।
এই দিন, মসজিদগুলি প্রদীপ এবং রঙিন কাগজ দিয়ে সজ্জিত করা হয় এবং বিশেষ প্রার্থনা ও বক্তব্যের আয়োজন করা হয়। লোকেরা তাদের বাড়িঘর পরিষ্কার করে এবং নতুন পোশাক পরে৷ তাঁরা তাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের সাথে আলিঙ্গনবদ্ধ হয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং মিষ্টি বিতরণ করেন৷ রাস্তায় মিছিল বের করা হয় এবং সারা দিনই উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
ঈদ মিলাদ-উন-নবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল মুহাম্মদ (সা:) এর জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কে মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া। মহানবী তাঁর মহান চরিত্রের জন্য বিখ্যাত ছিলেন এবং তাঁর জীবন আজকের বিশ্বে সঠিক পথনির্দেশের একটি চিরন্তন উদাহরণ। ঈদ-মিলাদ-উন-নবী আমাদেরকে মুহাম্মদ (সাঃ) এর শিক্ষা অনুসরণ করতে এবং তাঁর মতো জীবন যাপন করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।
আসুন এই পবিত্র দিনটিতে আমরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর শিক্ষাকে অনুসরণ করার এবং ভালো কাজ করার প্রতিজ্ঞা করি। আসুন আমরা এই আনন্দের দিনটি শান্তি, ভালোবাসা এবং ভ্রাতৃত্বের সাথে উদযাপন করি।