ভাগ্যরেখা লেখা থাকে বলেই তো বলা হয়। যদি না থাকত, তাহলে উমা রমণন আজ ভারতের প্রথম মহিলা উদ্যোগপতি হয়ে উঠতে পারতেন না। এমন একটা সময় যখন সবে অর্থনৈতিক উদারীকরণের পথে পা মেলা, মহিলাদের উদ্যোগপতি হওয়ার কথা ভাবাটাই ছিল অভাবনীয়, সেই সময় উমার এই অসাধারণ সাফল্য অনুপ্রাণিত করে সকলকে।
১৯৪৮ সালের নভেম্বরে কেরলে জন্ম নেওয়া উমা রমণন ছিলেন সত্যিকারের স্বপ্নবাজ। স্কুল জীবন থেকেই তিনি ব্যবসা করার স্বপ্ন দেখতেন। কলেজে পড়ার সময় তিনি একটি ছোট্ট হস্তশিল্পের দোকান খোলেন। এই দোকানই ছিল তার উদ্যোগপতি জীবনের সূচনা।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মহিলা উদ্যোগপতি হওয়া সহজ ছিল না। অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা এবং সামাজিক বাধার মুখোমুখিও হতে হয়েছে উমাকে। কিন্তু তিনি কখনো হাল ছাড়েননি।
১৯৭৫ সালে উমা একটি বস্ত্র রপ্তানি সংস্থা শুরু করেন। কিন্তু ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনা আর প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার অভাবে প্রথম দিকে ক্ষতির মুখে পড়েন। তবে, তিনি নিজেকে অবিরাম গড়ার প্রক্রিয়ায় ছিলেন। বিভিন্ন বই পড়েন, সেমিনারে অংশ নেন এবং অন্যান্য সফল উদ্যোগপতিদের কাছ থেকে শিক্ষা নেন।
নিজের অধ্যবসায় এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলে উমার সংস্থা দ্রুতই বৃদ্ধি লাভ করে। তিনি তার পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে তার সংস্থা ভারতের প্রথম পোশাক রপ্তানিকারক সংস্থা হিসাবে স্বীকৃতি পায়।
ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি উমা রমণন সামাজিক দায়বদ্ধতায়ও বিশ্বাসী। তিনি নারীদের স্বনির্ভরতা ও শিক্ষার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০০৬ সালে ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন।
উমা রমণন আজ ভারতীয় উদ্যোগ জগতের এক অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করেছেন মহিলাদের পক্ষেও যেকোনো কিছু করা সম্ভব, যদি তাদের মধ্যে অধ্যবসায় এবং স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা থাকে। তাঁর জীবন ও অর্জন সকলকেই উৎসাহিত করবে তাদের স্বপ্নগুলোকে অনুসরণ করতে এবং সফলতা অর্জন করতে।