একজন প্রতিভাধর ব্যক্তির জন্ম




একটা সময় ছিল যখন দেখলেই ভয় করতো – ভয়ে আঁতকে উঠতাম। কিন্তু এখন হাসি পায় ভাবতে। আমার ঠিক পাঁচ বছর বয়স হবে না হবে, তার আগে যখন আমায় জিজ্ঞাসা করা হতো, “বড় হয়ে কি হবে?” আমি অটল রবে সেই একই জবাব দিতাম, “খেলোয়াড়”। আমাদের পাড়াতে আমিই ছিলাম সবচেয়ে ছোট, কিন্তু সবচেয়ে চঞ্চল। যাই হোক, ক্রিকেট তো আমার প্রাণ। এভাবেই কেটে গেল কয়েক বছর। খেলাধুলো আর মस्तি ছিল আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সবাই বলতো, “এ ছেলেটা একদিন অনেক বড় হবে।” আমিও নিজেকে ভাবতাম অনেক বড় খেলোয়াড়। কিন্তু হলো উল্টোটাই। যত বড় হতে থাকলাম, দেখলাম আমি নই সেই ‘পরিশ্রমের ধন্য আলিবাবা’। আর দিন দিন খেলা থেকে দূরে সরে গেলাম।

ব্যস! এরপর শুরু হলো আমার সংগ্রাম। আমার মন বলে, “খেলার মাঠে নাম।” কিন্তু আমার শরীর বলে, “না, তুমি এটা পারবে না।” মন বলে, “হ্যাঁ, তুমিই পারবে।” শরীর বলে, “না, না, তুমি অচল।” এভাবে চললো দুইয়ের মাঝে দ্বন্দ। আমি কখনো মনের কথা শুনতাম, কখনো আবার শরীরের কথা। আর শুরু হয়ে গেল আমার রোগ।

  • কখন পায়ের গোড়ালি ব্যথা করতো,
  • কখন হাঁটুতে ব্যথা হতো,
  • কখন আবার কোমরের ব্যথা,
  • কখন কাঁধ ব্যথা,
  • কখন আবার কব্জি,
  • কখন মাথা,
  • কখন ডান হাত তো কখন বাম হাত।

যেখানেই হোক, ব্যথা যেন আমার জীবনের সঙ্গী। আমি প্রচুর ডাক্তার ঘুরলাম। কত খরচ কত ঔষধ কিনলাম সে তো আর বলার নেই। কিন্তু কোনো সুফল হলো না। বরং ব্যাথা আরো বাড়লো। আমি হতাশ হয়ে পড়লাম আর নিজেকে একটা অযোগ্য ভাবতে শুরু করলাম। আর আমার চারপাশের লোকেরা বলতে লাগলো, “আরে, ছেলেটার তো আর কিছু হওয়ার নেই।”

এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন আমার আলোকিত হলো পথ। আমার পুরনো এক খাতায় একটা লেখা পড়লাম। “সত্যিই যদি চাও তো সাফল্য তোমাকে খুঁজে নেবে।” এই লেখাটা আমার ছোটবেলায় লিখেছিলাম আমি। একটা ক্ষীণ আশায় আবার খেলাধুলো শুরু করলাম। শুরু করলাম সাঁতার শেখা। প্রথম দিকে কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু হাল ছাড়িনি। একটু একটু করে প্র্যাকটিস করতে করতে অবশেষে সাঁতার শিখে গেলাম।

এরপর আমি রোজ সাঁতার কাটতে যেতাম। একদিন একজন ভদ্রলোক আমার সাঁতার কাটার স্টাইল দেখে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কোন ক্লাবে সাঁতার শেখো?” আমি তো কী বলবো ভেবে পাচ্ছি না। যাই হোক, আমি উত্তর দিলাম, “স্যার, আমি ক্লাবে সাঁতার শিখিনি। আমি নিজে নিজে শিখেছি।” ভদ্রলোক অবাক হয়ে গেলেন। তিনি আমার কথা ভালো করে শুনলেন আর তারপর বললেন, “আরে, তুমি তো অনেক ভালো সাঁতার কাটো। কেন তুমি কোন ক্লাবে যোগদান করো না?” আমি তো ভয়ে ভয়ে বললাম, “স্যার, আমার তো আর কিছু হবে না।” ভদ্রলোক বললেন, “হবে কেন? তুমি অবশ্যই অনেক ভালো খেলোয়াড় হতে পারবে। তুমি একটা ক্লাবে যোগ দাও।”

আমি সেই ভদ্রলোকের কথা মতো কাছের একটা সাঁতারের ক্লাবে যোগদান করলাম। সেখানে আমার ট্রেনার দেখলো আমার সাঁতার কাটার স্টাইল এবং প্রতিভাকে। তিনি আমাকে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে বললেন। আর আমার তো প্র্যাকটিস করে যেতে লাগলাম। প্র্যাকটিস করে করে দেখলাম, আমি আগের চেয়ে অনেক ভালো সাঁতার কাটছি। আর আমার ব্যথাও অনেকটা কমে গেছে। এখন আমি একজন পেশাদার সাঁতারু। আমি অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অনেক পুরস্কারও পেয়েছি। এখন আমি অনেক খুশি।

বন্ধুরা, জীবনে সব সময়ই তোমাদের চারপাশে এমন অনেক লোক থাকবে, যারা তোমাদের নিরুৎসাহিত করবে। কিন্তু তুমি কেউ তাদের কথা শোনা। যদি তুমি সত্যিই কিছু করতে চাও, তাহলে সেটা তুমি অবশ্যই করতে পারবে। তুমি যদি চাও, তাহলে তুমি অবশ্যই একজন প্রতিভাধর ব্যক্তি হতে পারবে।