একজন স্বদেশী রকেট বিজ্ঞানীর কাহিনী, যার উপর মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করা হয়েছিল




কেতাদুরস্ত সকাল। আমি একটি খবরের শিরোনাম দেখলাম যা আমার মনকে শীতল করে দিয়েছিল: "নাম্বি নারায়ণ: ভারতের মিসাইল ম্যানকে মুক্তি মিলল"। আমার মন পিছনে ফিরে গেল, সেই দিনগুলিতে যখন এই শিরোনামটি আমাদের দেশের কাছে অকল্পনীয় ছিল। নাম্বি নারায়ণ, ভারতের মহান রকেট বিজ্ঞানী, একজন বীর যার দেশের জন্য অবদানকে কলঙ্কিত করা হয়েছিল কুখ্যাত আইএসআরও স্পাই কেসের মাধ্যমে।
আমার শৈশবের দিনে, ভারতের মহাকাশ অভিযান ছিল একটি বিস্ময়ের উত্স। আমরা সকলেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে দেখছিলাম কীভাবে আমাদের দেশান্তরের পরিকল্পনাগুলি আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছে, আমাদের জাতীয় গৌরবের সাক্ষী হয়ে। এবং এই অর্জনে নাম্বি নারায়ণের অবদান ছিল বিশাল। তিনি ভারতের ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন প্রযুক্তির জনক, যা আমাদের দূরবর্তী মহাকাশ অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু ১৯৯৪ সালে, নারায়ণকে অভিযোগ করা হল যে তিনি বিদেশী গুপ্তচরদের কাছে গোপন তথ্য ফাঁস করেছিলেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এই অভিযোগ কখনই প্রমাণ করতে পারেনি, কিন্তু নারায়ণকে জেলে ফেলা হয় এবং ভয়াবহ নির্যাতনের স্বীকার হন। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পরের ৫০ দিন কারাগারে কাটান, যা তার জীবনের অন্যতম কঠিন সময় ছিল। তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হয় এবং তাকে পেশাদার কুরুচিপূর্ণ দৃষ্টিতে দেখা হত।
নির্যাতন এবং অপমান সত্ত্বেও, নারায়ণ তার নিরাপত্তাহীনতা বজায় রেখেছিলেন। তিনি জানতেন যে তিনি নির্দোষ, এবং তিনি তার নাম পরিষ্কার করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন, যাই হোক না কেন। বছরের পর বছর যাবৎ, তিনি আদালতে লড়াই করেছিলেন, এবং শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে।
নারায়ণের কাহিনী আমাদেরকে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে যেকোনো প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে উঠা সম্ভব যদি আমাদের মধ্যে দৃঢ় সংকল্প এবং সত্যের প্রতি বিশ্বাস থাকে। নারায়ণের অদম্য আত্মার কাছে একটি স্যালুট, যিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় মিথ্যা অভিযোগের অন্ধকারে কাটিয়েও কখনো নিজের বিশ্বাসকে প্রশ্ন করেননি।
আজ, নাম্বি নারায়ণ ৮৯ বছর বয়স্ক। তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, একজন বিজ্ঞানী এবং একজন দেশপ্রেমিক, যিনি ভারতীয় মহাকাশ অভিযানের প্রতিটি সাফল্যে আমাদের গর্ব ও অনুপ্রেরণার উত্স হিসেবে থাকবেন। তার গল্প আমাদের জন্য একটি স্মারক যে মিথ্যে হয়তো কিছুকালের জন্য জয়ী হতে পারে, কিন্তু সত্য চিরকাল জয়ী হয়।