আনশুল কামবোজঃ
কামবোজের কথা শুনলেই আমাদের সবার মনে প্রথমেই আসে সেই রাজ্যের রাজধানী বীরাতনগর। আর ঠিকই তো, ভারতের রাজস্থানের বিজয়নগরের কাছে অবস্থিত এই রাজ্যটি আদপে রাজে রাজে একটি বীরত্বের সাক্ষ্য বহন করে আসছে। রাজপুত জাতির বীর সেনাপতিদের জন্য এই রাজ্যটি একটি প্রধান কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছিল।
আজ আমরা সেখানকারই এমন একজন সেনাপতির কাহিনী শুনবো, যিনি নিজের জীবনে এমন একটা পরিবর্তন এনেছিলেন, যা আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তিনি হলেন সেনাপতি পৃথ্বীরাজ কামবোজ।
পৃথ্বীরাজের জীবন ছিল বীরত্ব আর নিষ্ঠার এক কাহিনী। তিনি ছিলেন কামবোজ রাজা জয়পালের প্রিয় সেনাপতি। তাঁর নেতৃত্বে কামবোজ সেনাবাহিনী একের পর এক জয়ের স্বাক্ষর রেখেছিল। তাঁর বীরত্বের কাহিনী আজও কামবোজের লোককথায় রয়ে গেছে।
কিন্তু একদিন এমন একটা সময় এলো, যখন পৃথ্বীরাজের জীবনই বদলে গেল। সেই সময় চলছিল দ্বাদশ শতাব্দী। ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে তখন গজনভীদের আক্রমণের মুখে পড়েছিল। গজনভী সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে তাদের সেনাবাহিনী বার বার ভারত আক্রমণ করছিল।
১০১০ সালে গজনভীরা আবারও ভারতে আক্রমণ করল। এবার তাদের লক্ষ্য ছিল কামবোজ রাজ্য। পৃথ্বীরাজের নেতৃত্বে কামবোজ সেনাবাহিনী গজনভীদের সঙ্গে যুদ্ধে নামল। কিন্তু এই যুদ্ধে কামবোজ সেনাবাহিনীর পরাজয় হলো। পৃথ্বীরাজ সহ অনেক সেনাপতিই এই যুদ্ধে নিহত হলেন।
কিন্তু পৃথ্বীরাজের মৃত্যুটি ছিল একটা রহস্য। তাঁর মৃতদেহ কখনোই পাওয়া যায়নি। অনেকের বিশ্বাস, তিনি সেই যুদ্ধে মারা যাননি, বরং গজনভীদের হাতে বন্দী হয়েছিলেন।
গজনভীদের কাছে বন্দী থাকাকালীন পৃথ্বীরাজের জীবনটাই বদলে গেল। তিনি গজনভী সুলতান মাহমুদের সঙ্গে পরিচয় হয়। মাহমুদ ছিলেন একজন দয়ালু ও ন্যায়পরায়ণ শাসক। তিনি পৃথ্বীরাজের বীরত্ব ও সাহসে মুগ্ধ হলেন। মাহমুদ পৃথ্বীরাজকে নিজের দরবারে একটি উচ্চ পদ দিলেন।
পৃথ্বীরাজ মাহমুদের দরবারে স্বচ্ছন্দ্যে নিজের জীবন কাটাতে লাগলেন। তিনি মাহমুদের বিশ্বস্ত সেনাপতি হিসাবে কাজ শুরু করলেন। তিনি মাহমুদের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক অভিযানে গেলেন।
এই সব অভিযানের সময় পৃথ্বীরাজ ভারতের সংস্কৃতি ও সভ্যতার সঙ্গে পরিচিত হলেন। তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হলেন। তিনি বুঝতে লাগলেন যে, গজনভীরা যদিও ভারতকে জয় করেছে, কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতা এতটাই শক্তিশালী যে, তা কখনোই নষ্ট হবে না।
কামবোজের বীর সেনাপতি পৃথ্বীরাজ একদিন নিজের জীবন বদলে ফেলেছিলেন। যিনি একদিন গজনভীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, তিনি পরে গজনভী সুলতানের একজন বিশ্বস্ত সেনাপতি হয়েছিলেন। তাঁর এই জীবন-পরিবর্তনের গল্প আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। এটি আমাদের শেখায় যে, জীবনে যেকোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে আমাদের সবসময় সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে সেই পরিবর্তনগুলো মেনে নিতে হবে।