এদার পুনওয়ালার উদ্ভাবনী সাফল্য: বিশ্বের টিকা বিপ্লবে ভারতের নেতৃত্ব




এদার পুনওয়ালার নামটি আজ বিশ্বব্যাপী পরিচিত। সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার সিইও হিসেবে, তিনি কোভিড-19 মহামারী সংকটকালে বিশ্বব্যাপী টিকা সরবরাহে ভারতের অগ্রণী ভূমিকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি এবং দৃঢ় সংকল্প এই অসাধারণ কৃতিত্বের পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
ভারতে জন্মগ্রহণ এবং বেড়ে ওঠা, এদারের সর্বদা বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রতি একটি আবেগ ছিল। তিনি পুনের প্রতিষ্ঠিত বেয়ার স্কুলে পড়াশোনা করেছেন এবং পরে যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
এদারের বাবা, সাইরাস পুনওয়ালার প্রতিষ্ঠিত সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী সংস্থা। তিনি ২০০১ সালে পরিবারের ব্যবসায় যোগ দেন এবং সাব-সাহারান আফ্রিকায় টিকা সরবরাহকে বিস্তৃত করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বিপণন বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
২০১১ সালে, এদারকে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার সিইও ঘোষণা করা হয়েছিল, মাত্র ৩০ বছর বয়সে। এই সময়ে, সংস্থাটি দ্রুত বৃদ্ধি এবং বিস্তারের মধ্যে ছিল, বিশ্বব্যাপী টিকা সরবরাহে নেতৃস্থানীয় হয়ে উঠছিল। এদারের উদ্ভাবনী এবং ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা তাঁকে এই চ্যালেঞ্জকে আলিঙ্গন করতে সাহায্য করেছে।
এদারের নেতৃত্বে, সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া টাইফয়েড, ডেঙ্গু এবং নিউমোনিয়া সহ বিভিন্ন টিকা বিকাশ এবং উৎপাদন করেছে। তিনি কম খরচে মানসম্পন্ন টিকাগুলি ব্যাপক জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

কোভিড-19 মহামারীর সময়ে এদার পুনওয়ালার অবদান:

কোভিড-19 মহামারীর আগমনের সাথে, বিশ্বব্যাপী একটি টিকা সংকট তৈরি হয়েছিল। এদার এই পরিস্থিতিকে একটি সুযোগ হিসাবে দেখেছেন যার মাধ্যমে ভারত নিজেকে বিশ্বব্যাপী টিকা উৎপাদনের কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া, অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাথে অংশীদারিত্বে, ভারতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার স্থানীয় উৎপাদন শুরু করেছে, যা পরে Covishield নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। এই উদ্যোগ অত্যন্ত সফল হয়েছিল এবং Covishield বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত টিকাগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠেছিল।
এদার দৃঢ় বিশ্বাস করতেন যে কোভিড-19 টিকাগুলি সাশ্রয়ী মূল্যে এবং সমানভাবে উপলব্ধ করা উচিত। সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া ভারতে এবং বিশ্বজুড়ে টিকা সরবরাহের জন্য বেশ কয়েকটি সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে অংশীদারিত্ব করেছে।

সমাজে এদার পুনওয়ালার অবদান:

এদার টিকা উৎপাদনে তাঁর অর্জনের বাইরেও সমাজে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তিনি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন সহ বিভিন্ন কারণকে সমর্থন করার জন্য অদার পুনওয়ালার ক্লিন সিটি ইনিশিয়েটিভ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গবেষণাও সমর্থন করেছেন।

পুরস্কার এবং সম্মাননা:

এদার পুনওয়ালার কাজকে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী। তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ইয়ং গ্লোবাল লিডার এবং ফরচুন ম্যাগাজিনের বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০ জন নেতার মধ্যে একজন হিসাবেও স্বীকৃত হয়েছেন।

উপসংহার:

এদার পুনওয়ালার গল্প একটি উদ্ভাবন, দৃষ্টিভঙ্গি এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের উদাহরণ। তিনি বিশ্বব্যাপী টিকা সরবরাহে ভারতের নেতৃত্বের পথ প্রশস্ত করেছেন এবং বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যকে উন্নত করতে অব্যাহত রেখেছেন।