এসএসএলসি পুনর্মূল্যায়ন ফলাফল যা জানতে মরে যাচ্ছেন বাচ্চারা




আল্লাহ্‌ রে, এবার তো রামধনও এসে গেল! পাশ করল কিনা, সেই চিন্তাতেই বুক টনটন করছে। জীবনে আর কখনও এমন উদ্বেগের মুখ দেখিনি। এখন তো দিনরাত ভাবছি, আফসোসের কান্নায় ভেঙে পড়বে নাকি আনন্দের হলুদ দোল খেতে হবে?
গত কয়েক দিন তো আমাদের বাসায় এমন রেষারেষি চলছে যে সবাই রীতিমতো স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মা বিছানায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখার ভান করছে, কিন্তু নজর তো মুঠোফোনের দিকে লাগানো। বাবা কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর বারান্দায় গিয়ে ব্যাগ থেকে মুঠোফোন বের করছে। ভাইরাতো রাজ্যের সব ইন্টারনেট সংযোগ তাদের কব্জায় রেখেছে। আর আমি, হায় রে আমি! আমার তো এমন অবস্থা যে, মনে হচ্ছে কেউ বুকের ভেতরে আঙুল পুরে কলিজা ছিঁড়ে ফেলছে।
এতদিন পরীক্ষা দেওয়ার পর আজকে ঠিক হয়েছে ফলাফল বের হবে। সকাল থেকেই পুরো পরিবারের একটা অদ্ভুত চুপচাপ ভাব। এমন একটা সময় যখন সবাইকে একসাথে দেখা যায়, কিন্তু সবার মুখে এমন একটা অভিব্যক্তি যেনো সবাই এই মুহূর্তটা কাটিয়ে দিতে চায়। আমি তো এমনকি আমার বাবা-মাকে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসতেও দেখিনি আজ।
"এই, তোর কি হলো? বারান্দায় দাঁড়িয়ে কী করছিস?"
পেছন থেকে হঠাৎ করে মায়ের চিৎকার। ভয়ে আমার বুকটা অন্তত দু'ইঞ্চি দুরে সরে গেল।
"না, কিছু না তো মা।"
"কিছু না হলে তুই এখানে দাঁড়িয়ে কী করছিস? ফলাফল তো বের হয়ে গেছে। যা দেখে আয়।"
আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। দরজার সামনে এসে আবার পিছন ফিরে গেলাম। না, এখন এখান থেকে যাবো না। কিছুক্ষণ পরে যাবো।
"যা দেখব এখনই দেখ। এখানে দাঁড়িয়ে কী হবে?"
এবার বাবার কণ্ঠ। আমি চোখ বুজে কয়েকটা গভীর শ্বাস নিলাম। হাতটা কাঁপছে। চোখের সামনে সব কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে। মনে হচ্ছে মাথাটা ভারী হয়ে যাচ্ছে। আর কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার মনে হলো, আমি এখানেই অজ্ঞান হয়ে যাবো।
কয়েক মুহূর্ত পরে সাহস যোগাড় করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। সবাই বসার ঘরে বসে আছে। তাদের সবার চোখে সবুজ রঙের কিছু একটা ঝলকানি।
"কী হয়েছে? সবাই এমন চুপ করে আছো কেনো?"
"তোর ফলাফল দেখে সবাই হতবাক হয়ে গেছে।"
মা বলল।
"কী হয়েছে? আমি পাশ করিনি নাকি?"
"না, না। তুই পাশ করেছিস।"
মায়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার চোখের পানি আর থামছে না। কতক্ষণ মাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে ছিলাম, জানি না। অনেকক্ষণ পরে মা আমাকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ড্রয়িংরুমের মাঝখানে নিয়ে এলো।
"এই যে দেখ, তোর ভাই আর বাবা কাকাও পাশ করেছে।"
আমি আমার ভাই এবং বাবার দিকে তাকালাম। সবারই চোখে আনন্দের জল ঝলমল করছে।
"সবাইকে জানাও তো মেয়েটা কত নাম্বার পেয়েছে?"
বাবা বলল।
"ফার্স্ট ডিভিশন মেয়েটা পেয়েছে।"
মা আমার কাঁধে হাত রেখে বলল।
আমি আনন্দে চেঁচিয়ে বললাম, "আমি পাশ করেছি! আমি পাশ করেছি!"
এইবার সবাই হেসে উঠল। আমিও তাদের সাথে হাসলাম। এতদিনের চাপ, উদ্বেগ সব ভুলে গেলাম। আজ আমাদের বাসায় শুধু আনন্দের মেলা।
"আচ্ছা, এবার তো শেষ পরীক্ষা দিয়ে লাফ দিয়েছিস। এখন কী করার ইচ্ছে হচ্ছে?"
মায়ের প্রশ্নে আমি ভাবলাম।
"আমি একটা ছোট্ট বেকারি আর খাবারের দোকান খুলতে চাই।"
আমার কথাতে সবাই চুপ হয়ে গেল। তারপর সবাই হাসতে হাসতে বলল, "কোনো সমস্যা নেই। তুই যা ইচ্ছে করবি, আমরা তোকে সাপোর্ট করব।"
আমি আনন্দে মায়ের কোলে মাথাটা রাখলাম। আমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য আমার পরিবারের পাশে থাকাটা আমার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।