কিচ্ছু ঢেউ মেরে গেয়েছি,,,




আমার আছে বন্ধু মিশু, এখন ও ক্লাস টুয়েল্ভে পড়ে। আমার মতই চেয়ে বেড়ায় কলেজে। আমার চেয়ে একটু কমই চেষ্টা করে সে। কিন্তু চেষ্টার ঘাটতি পূরণের জন্য একটা জিনিসে সে আমার থেকে অনেক এগিয়ে। সেটা হলো - গান। রাজ্য স্তরের এক প্রতিযোগিতায় ওকে গান গাইতে দেখার পরে বিস্মিত হয়ে গেয়েছিলাম। তখন থেকেই তাকে এক কথায় গানের জাদুকর বলে ডাকি।
আজ মিশুর বার্থডে। সন্ধ্যেবেলায় বন্ধুদের নিয়ে সে সোনারপুরের বড় সিনেমাপ্যালেসে বসে আছে। স্যারদের বহু অনুরোধে আমার কাছে মিশু একটি গান অনুরোধ করেছে। ভয় হচ্ছে। অতটা গলা নেই আমার। স্কুলে বার কয়েক ক্লাসে একাধিক উপলক্ষ্যে গান গেয়েছি। কিন্তু লোকেদের সামনে গান গাওয়া একেবারেই ভিন্ন অনুভূতি। এর আগে কখনো সিনেমাহলে এভাবে গান গাইনি। কিন্তু মিশুর অনুরোধ অমান্য করতে পারলাম না। তাই গলা নিয়ে কিছুটা চিন্তা থাকলেও আবেগে গা ছাড়িয়ে ফেলেছি।
একটা গানই শুনিয়ে আসি না। আর বেশি আফসোস করার দরকার নেই। তাই স্যারদের অনুরোধকে অগ্রাহ্য করে গেলাম। সেই যায়গার সবচেয়ে ভালো গায়ক নন্দিত দা, সে হঠাৎ আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,"ভয় পেয়ো না, একটা গান শোনাবে। তারপর বন্ধুরা তোমাকে আর গান শোনাতে দেবে না।" এই কথাটা শুনে কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে।
পর্দায় সিনেমার গানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে একটা মিষ্টি গান গেয়ে ফেলি। হঠাৎ পুরো সিনেমা হলের দর্শকদের তালির শব্দে আমার কান পুরো বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধুরা সিনেমাপ্যালেস ভাঙ্গবে এমনভাবে চিৎকার করছে। স্যারদের মুখে অভিভূতি। আমি নিজেও অবাক!
সেদিন বার্থডেটা মিশুর হলেও সে আমায় উপহার দিয়েছে। উপহারটা হলো - আত্মবিশ্বাস। সে আমায় আজ একটা বিষয় শিখিয়েছে যে, আমাদের যদি আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকে তাহলে প্রতিভাই অপ্রকটিত থেকে যায়। কিন্তু আমাদের সাহস থাকলে এবং আমরা নিজেদের একটু পুশ করতে পারলে, সেই প্রতিভা কখনোই লুকিয়ে থাকতে পারে না।মনে রাখব, আমাদের অজানা সম্ভাবনা অনেক। যদি সাহস পাই তবে সেটাকে প্রকাশ করতে পারব।