কানওয়ার যাত্রা




শিবভক্তদের সাধনা পর্ব কানওয়ার যাত্রা
হর হর মহাদেবের জলধারা নিয়ে শিবের পবিত্র ধামে পৌঁছনোর এই সাধনা পর্ব আজ দেশের অন্যতম বিশাল ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। কয়েকশো কিলোমিটার হেঁটে মুখে পবিত্র গঙ্গাজল নিয়ে বারাণসী, হরিদ্বার, গঙ্গোত্রী থেকে আসা কানওয়ারিয়াদের পবিত্র পদধ্বনিতে মুখর হয়ে থাকে শহর কলকাতাও। শিবরাত্রির আগে শুরু হওয়া কানওয়ার যাত্রার শেষ হয় মহাশিবরাত্রির দিন। মন্দির থেকে বাল্টিতে জলভরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে যাত্রা পথের সঙ্গে নিজেকেও তপ্ত করেন কানওয়ারিয়ারা। মাঝে মাঝে বিশ্রাম নেওয়া হয়, কিন্তু পথচলার ক্লান্তি তাঁদের দমাতে পারে না। সব শিবভক্তই হর হর মহাদেবের জলধারায় শিবকে স্নান করিয়ে পূজা করেন। এমনকি বিদেশেও এখন এই যাত্রার প্রচলন রয়েছে।
কানওয়ার যাত্রা উৎপত্তি ও কিংবদন্তি
কানওয়ার যাত্রা প্রকাশ্যে প্রথম উদযাপিত হয়েছিল উত্তরাখণ্ডে। তবে কানওয়ার যাত্রার আদি উৎস ও উদ্ভব নিয়ে রয়েছে বহু কিংবদন্তি। কিংবদন্তি অনুসারে প্রায় ১০০০ বছরেরও আগে, শিবভক্ত লৌহার মূর্তি গড়া মহর্ষি জমদগ্নি তার ছেলে পারশুরামকে কাশীতে গিয়ে শিবলিঙ্গের পূজা করতে বলেন। পিতার আদেশ পালনের জন্য পারশুরাম হরিদ্বার থেকে গঙ্গাজল নিয়ে হেঁটে কাশীতে গিয়ে শিবলিঙ্গের অভিষেক করেন। তখন থেকেই শুরু হয় কানওয়ার যাত্রা।
কানওয়ার যাত্রার বিভিন্ন ধরন
কানওয়ার যাত্রা তিন রকমের হয়।
১. ঠেকাবাজি কানওয়ার: এই কানওয়ারিয়ারা গঙ্গাজল নিয়ে মন্দির পর্যন্ত হেঁটে যান এবং ফিরে আসেন একই রাস্তা দিয়ে।
২. দশবাজি কানওয়ার: এই কানওয়ারিয়ারা মন্দির পর্যন্ত হেঁটে যান তবে ফিরে আসেন অন্য রাস্তা দিয়ে।
৩. চৌদ্দবাজি কানওয়ার: এই কানওয়ারিয়ারা মন্দির পর্যন্ত হেঁটে যান এবং ফিরে আসেন অন্য রাস্তা দিয়ে। এটি সবচেয়ে কঠিন যাত্রা প্রক্রিয়া।
কানওয়ারিয়াদের পোশাক
শিবভক্ত কানওয়ারিয়ারা সাধারণত কেশরী রঙের কাজ করা লুঙ্গি বা ধুতি পরেন। তাঁদের মাথায় শিবের ডমরুখচিত রুমাল থাকে। কানওয়ারিয়ারা শিবের প্রতীক ত্রিশূল হাতে নিয়ে যান। ভোলের ভক্তরা চাঁদি বা সোনার তৈরি ত্রিশূল, ডমরু, রুদ্রাক্ষের মালা গলায় পরে থাকেন।
কানওয়ার যাত্রার নিয়ম
কানওয়ার যাত্রায় কিছু নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে যা কানওয়ারিয়াদের অবশ্যই মেনে চলতে হয়।
১. নিরামিষা ভোজন: কানওয়ারিয়াদের জলযাত্রা শুরু হওয়ার থেকে শেষ হওয়া অবধি নিরামিষা ভোজন করতে হয়।
২. মদ্যপান: কানওয়ারের সময়কালে কানওয়ারিয়ারা মদ্যপান করতে পারবেন না।
৩. শুদ্ধ জীবনধারা: এই সময়কালে কানওয়ারিয়াদের একটি শুদ্ধ জীবনধারা বজায় রাখতে হয়।
কানওয়ার যাত্রার সময়
শিবরাত্রি উৎসবের ঠিক ১৪ দিন আগে কানওয়ার যাত্রা শুরু হয়। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসে কালোচৌদ্দশী থেকে মহাশিবরাত্রি পর্যন্ত এই যাত্রা পালন করা হয়।
জনপ্রিয় শিব মন্দির
দেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় শিব মন্দির নিম্নরূপ:
১. বাবা অমরনাথ মন্দির: জম্মু-কাশ্মীরের হিমালয়ের একটি গুহায় অবস্থিত এই মন্দির শিবের বরফের লিঙ্গের জন্য বিখ্যাত।
২. কেদারনাথ মন্দির: উত্তরাখণ্ডের হিমালয়ের একটি দূরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই মন্দিরটি ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একটি।
৩. বিশ্বনাথ মন্দির: উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে অবস্থিত এই মন্দিরটি ভগবান শিবের অন্যতম পবিত্র মন্দির।
৪. সোমনাথ মন্দির: গুজরাটের সোমনাথে অবস্থিত এই মন্দিরটি ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে প্রথম এবং সবচেয়ে পবিত্র মন্দির।