কামরান গোলাম




শুধুমাত্র কয়েকজন ক্রিকেট-প্রেমী ছাড়া আর কেউই তখন বুঝতে পারেনি যে, সে একদিন পাকিস্তান টেস্ট দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামবে। সকলেই জানতো কামরান গোলাম একজন দাপুটে অল-রাউন্ডার, কিন্তু তাবে সব সীমাবদ্ধ ছিলো দেশীয় ক্রিকেটে। নিজের জেলা গুলমির হয়ে নানান প্রতিযোগিতায় নিজের নাম করেছিলো এই সবল সন্তান, কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে হারিয়ে গিয়েছিলো সেই সব অর্জনের স্বীকৃতি। তানভীর আহমেদ এবং উমর গুলের মত তারকা ক্রিকেটারদের সাথে একই মাঠে খেললেও, নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারেনি কামরান। কখনো দলের প্রয়োজন হলেই উইকেটে এসে বল করেছে, আবার কখনো দলের সংকটে ব্যাট হাতে নেমে সব ঝড়ঝঞ্ঝাকে পাশ কাটিয়ে দলকে জয়ের দোরগোড়ায় তুলেছে। কিন্তু তারপরও, সামনে এগোতে পারেনি। অন্যদিকে গুলমি এলাকার অন্য ক্রিকেটারদের একের পর এক ডাক আসছে জাতীয় দলে, কিন্তু অদৃষ্ঠের পরিহাস তাকে টানছে পিছিয়ে। কিন্তু এরপরই এলো সেই দিনটি।

আজ থেকে ১০ বছর আগে, ২০১২-১৩ সালের দেশীয় টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায় গুলমির প্রতিনিধিত্ব করল কামরান গোলাম। সেই টুর্নামেন্টে তার ব্যাটিং একেবারেই ছিল দুর্দান্ত। সাতটা ম্যাচ খেলে ৩টি অর্ধ-শতক সহ মোট ২৫৮ রান করল। সেই সাথে ৭টি উইকেটও নিলো নিজের দাপুটে অফ-স্পিন দিয়ে। দলের পক্ষ থেকে সেই বছর সবচেয়ে বেশি রান করার পাশাপাশি উইকেটও নিয়েছিলো সেই। স্বাভাবিক ভাবেই সবার নজরে এলো এই অল-রাউন্ডার। এরপরই তাকে সুযোগ দেওয়া হলো পাকিস্তান 'এ' দলে।

স্বপ্নের শুরু

পাকিস্তান 'এ' দলের সেই সফরটি ছিল পুরোপুরি কামরান গোলামের। নিজের অসম্ভব ব্যাটিং এবং বোলিং দিয়ে মুগ্ধ করলো সকলকে। জিম্বাবুয়ে দলের বিরুদ্ধে অপরাজিত ১০৫ রানের ইনিংস খেলল এই ক্রিকেটার। তার অল-রাউন্ড পারফরম্যান্সের কাছে হেরে গেল জিম্বাবুয়ে 'এ' দল। সেই ম্যাচে ব্যাটে-বলে ২টি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ অ্যাওয়ার্ড পেয়ে প্রমাণ করল সে কেন জাতীয় দলে খেলার সুযোগের প্রত্যাশী। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি গোলামকে। ১০ বছর পর, ২০২২-২৩ সালে পাকিস্তান টেস্ট দলের হয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক হলো তার। তাও আবার দারুণভাবে।

অবিস্মরণীয় অভিষেক

রাওয়ালপিন্ডিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে ক্রিজে নামলেন কামরান গোলাম। দলের স্কোর ১৭৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে। ক্রিজে ছিলেন সহ-অল-রাউন্ডার ফয়াদ আলম। খেলার গতিতে পরিবর্তন আনলেন তারা দুজনে। ফয়াদ আলমের সেঞ্চুরির পাশাপাশি কামরান গোলামের অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংসে গড়ে উঠলো রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান দলের সর্বোচ্চ পঞ্চম উইকেট জুটির রেকর্ড।

গোলামের সামনে পাকিস্তান ক্রিকেটের দ্বার

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কামরান গোলাম পাকিস্তান ক্রিকেটের ভবিষ্যত। যদি সে তার ফর্ম ধরে রাখতে পারে, তাহলে তাকে আর পেছনে তাকাতে হবে না। পাকিস্তান দল তার জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ, পাকিস্তানের সীমিত ওভারের অধিনায়ক বাবর আজমের মতে, সেই ধরনের একজন অল-রাউন্ডার খুঁজছেন তারা অনেকদিন ধরে। তার কথায়, "আমাদের দলে একটি ভালো অল-রাউন্ডারের প্রয়োজন অনেকদিন থেকে। এবং এখন আমার বিশ্বাস, কামরান গোলাম সেই সুযোগটাই পূর্ণ করতে পারবে। তার ক্রিকেটীয় বুদ্ধি খুবই ভালো। আশা করছি, সে দলের জন্য দীর্ঘদিন খেলবে।"