ক্যালকাটাওয়ালি বুড়ি যার কারণে পেনা সিমেন্টের শেয়ারের দর উঠে গিয়েছিল।




আরে দাঁড়াও কী বললে তুমি? পেনা সিমেন্টের শেয়ারের দর ঘটেছে বলেই আমি শুনছি তো। তা তুমি এখন বলছ কীসের জোরে শেয়ারের দর উঠে গেল? আমার তো মোটেও কিছুই বুঝতে পারছি না।

হুঁহু, শুনো তবে। এই ঘটনাটা কিন্তু অনেক বছর আগের। তখন পেনা সিমেন্টের সময় খুব খারাপ যাচ্ছিল। শেয়ারের দর মরার মুখে। কোম্পানির অনেক টাকার লোকসান। কর্মীদের বেতনও অনেক দিন পাওনা। এই অবস্থায় আর মেলাতে পারছিলেন না কর্তারা। ভাবছিলেন, কোম্পানি বন্ধ করেই দেওয়া হবে।

ঠিক সেই সময়েই ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা। একদিন এক বাঙালি বুড়ি এসে হাজির হলেন কোম্পানির অফিসে। খুব দরিদ্র সেজেছিলেন। মুখে দু’বেলা খাবারের চিহ্ন নেই। হাতে একটা পুরনো ব্যাগ। ব্যাগটার মধ্যে নাকি বিষ্ণুপুরের মৃৎশিল্পের একটা মূর্তি ছিল।

বুড়ি এসে অফিসে কী বললেন জানো? বললেন, তার স্বপ্নে এসেছেন দেবী লক্ষ্মী। দেবী বলেছেন, পেনা সিমেন্টের শেয়ার কিনলে তার খুব ভালো হবে। বুড়ি তো খুব গরিব। শেয়ার কেনার মতো টাকা তার নেই। তাই তিনি এসেছেন কোম্পানির কর্তাদের অনুরোধ করতে। অনুরোধটা হল যে, তাকে কিছু শেয়ার ফ্রিতে দিলে ভালো হয়। যেহেতু দেবী লক্ষ্মী স্বপ্নে এসেছেন, তাই শেয়ারের দাম অবশ্যই বাড়বে।

কর্তারা বুড়ির কথা শুনে হেসে উড়িয়ে দিলেন। একটা বুড়ির স্বপ্নের কথা শুনে কোটি কোটি টাকার কোম্পানির শেয়ার কেউ ফ্রিতে দেয়? এ তো হাস্যকর কথা। তাই বুড়িকে ফিরিয়ে দেওয়া হল।

কিন্তু সচরাচর যা হয়, এখানেও তাই হল। বুড়ি অফিস থেকে ফিরে যাওয়ার পরের দিনই পেনা সিমেন্টের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে শুরু করল। কয়েকদিনের মধ্যে দাম দ্বিগুণ হয়ে গেল। কর্তারা তো হতভম্ব। তারা বুঝতে পারলেন, কী ভুল করেছেন।

কর্তারা তখন তাড়াতাড়ি বুড়িকে খুঁজতে শুরু করলেন। কিন্তু বুড়ির কোনো খোঁজই পাওয়া গেল না। বুড়ি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন।

এরপর থেকে কলকাতার ফুটপাতে বসে থাকা অনেক বুড়িই নিজেদেরকে পেনা সিমেন্টের শেয়ারের দাম বাড়ানোর জন্য দায়ী বলে দাবি করতেন। কেউ কেউ আবার বলতেন, তাঁরা হলেন সেই বুড়িরই আত্মীয়। কিন্তু আসল বুড়ি কে ছিলেন, কেউই জানলেন না।

আর ক্যালকাটাওয়ালি বুড়ির এই কাহিনী আজও প্রচলিত। অনেকেই মনে করেন, বুড়িটি কোনো দেবী ছিলেন। তিনি হয়তো দেবী লক্ষ্মীরই অবতার ছিলেন। কারণ, তাঁর স্বপ্নের কারণেই শেষ পর্যন্ত পেনা সিমেন্টের শেয়ারের দর বাড়ে।

আর কী, তা হলে বলো, এই কাহিনী শুনে কি তোমারও মনে হয় না, পেনা সিমেন্টের শেয়ারের দর বাড়ার কারণ আসলেই সেই ক্যালকাটাওয়ালি বুড়িটি ছিলেন?