গত শতাব্দীর শেষে যখন আইটি বিপ্লবের সূত্রপাত হল, তখন ক্রিস গোপালকৃষ্ণন তরঙ্গের শীর্ষে ছিলেন। তিনি ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং সিইও, একটি বহুজাতিক ভারতীয় আইটি সংস্থা যা আজ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম। তিনি ভারতের সেরা আইটি উদ্যোক্তাদের একজন হিসাবে বিবেচিত হন, এবং আধুনিক ভারতের তথ্য প্রযুক্তি শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসাধারণ।
গোপালকৃষ্ণন 1956 সালে তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতের শীর্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটগুলোর মধ্যে একটি, ভারতীয় প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, মাদ্রাস থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ভারতের বেঙ্গালুরুর একটি প্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তি সংস্থা প্যাটনির কম্পিউটার সিস্টেম বিভাগে কাজ শুরু করেন।
প্যাটনিতে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা গোপালকৃষ্ণনকে ব্যবসা এবং প্রযুক্তির জগতে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছিল। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে ভারতে একটি বিশাল আইটি শিল্প গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা রয়েছে, এবং তিনি এই সুযোগটি কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। 1981 সালে, তিনি এন. আর. নারায়ণ মূর্তি, এস. ডি. শিবুদাসন এবং এন. এস. রঘবানের সাথে মিলে ইনফোসিস প্রতিষ্ঠা করেন৷
ইনফোসিসের প্রাথমিক দিনগুলি কঠিন ছিল। সংস্থার কাছে খুব কম পুঁজি ছিল এবং তাদের তাদের পরিষেবাগুলির জন্য গ্রাহকদের খুঁজে পেতে লড়াই করতে হয়েছিল। তবে গোপালকৃষ্ণন এবং তাঁর সহকর্মীরা দৃঢ় ছিলেন যে তারা সফল হবেন এবং তারা কঠোর পরিশ্রম এবং দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে ক্রমে ব্যবসায় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন৷
1990 এর দশকের গোড়ার দিকে, ভারতের অর্থনীতিতে উদারীকরণ শুরু হলে ইনফোসিসের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা হয়। বিদেশী বিনিয়োগ ভারতে আসতে শুরু করে এবং তথ্য প্রযুক্তি শিল্প দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই পরিস্থিতির সুযোগ হিসেবে নিয়ে ইনফোসিস আন্তর্জাতিকভাবে প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
গোপালকৃষ্ণন তাঁর আন্তর্জাতিক প্রসারের কর্মসূচি তত্ত্বাবধানের জন্য নিযুক্ত হন এবং তিনি এই ভূমিকায় অসামান্য সাফল্য অর্জন করেন। তাঁর নেতৃত্বে ইনফোসিস বিশ্বজুড়ে 50 টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম শুরু করে এবং বিশ্বের প্রথম সারির আইটি সংস্থাগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত হয়।
2002 সালে, গোপালকৃষ্ণন ইনফোসিসের সিইও পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি 2011 সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ইনফোসিসের বৃদ্ধি এবং সাফল্যে তাঁর অব্যাহত ভূমিকা রয়েছে।
আইটি শিল্পে তাঁর অবদানের জন্য গোপালকৃষ্ণন বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি ভারত সরকার থেকে পদ্মভূষণ এবং পদ্মভিভূষণ এবং ফরাসি সরকার থেকে লিজিওন অফ অনার পেয়েছেন। তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, লখনৌ এবং গোকরাজু রাঙ্গারাজু ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলরও রয়েছেন।
গোপালকৃষ্ণন শুধুমাত্র একজন সফল ব্যবসায়ীই নন, তিনি একজন উদার এবং পরোপকারীও। তিনি বিশ্বাস করেন যে সফল ব্যক্তিদের তাদের সমাজে ফিরে দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে এবং তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক উন্নয়নের কারণগুলিতে ব্যাপকভাবে জড়িত রয়েছেন।
ক্রিস গোপালকৃষ্ণন একজন অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব যিনি প্রমাণ করেছেন যে কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় সংকল্প এবং দূরদর্শিতার মাধ্যমে সাধারণ লোকেরা অসাধারণ জিনিস অর্জন করতে পারে। তিনি ভারতের আইটি শিল্পের একজন অগ্রণী এবং তাঁর অবদান ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৌলিক ভূমিকা পালন করেছে। তিনি তরুণদের জন্য একটি রোল মডেল এবং তাঁর গল্প আগামী প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করতে থাকবে।