কলাম: কি কি নেই শারদা র সুরে!




বিহারের আকাশে হঠাৎ করেই ঝড় উঠল। বজ্রপাত, বৃষ্টি, ঝড় সব এক সঙ্গে। যেন এক নিমিষে মাকাল হয়ে যাবে সব। এমনি এক অবিশ্বাস্য পরিস্থিতিতেও গলায় এসে বেঁধে গেল শারদা। ওই সুরে, ওই হাওয়ায়, ওই অসম্ভব পরিস্থিতিতেও শারদার গানে সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেল। কেবল শোনা গেল ওনার সেই অবিস্মরণীয় কণ্ঠ। আজও সেই গানের সুর মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে। সে লোকগান। শুধু মাইকের উপর দিয়ে একেবারে উড়ে যাচ্ছে শারদার কন্ঠ। আর রাতে সেই গানের সুর মনে পড়লে সারারাত ঘুমই আসে না। শীতের রাতে যেন একটা নতুন রোমন্থন আনল সেই সুরে।

কিছু দিন আগে অসমে ব্রহ্মপুত্রের তীরে, ধানের ক্ষেতে রাঙা পোশাক পরা সেই কচুতোড়া মেয়েগুলোকে দেখলাম। আর তাদের কন্ঠে শুনলাম শারদার সুর। হাতে একটা ডান্ডা নিয়ে, জলে হাঁটু ভিজে তারা যেন রাঙা রোদেলা হয়ে উঠেছে। দাঁড়াতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। শুধু দেখতেই ইচ্ছে হচ্ছিল আর তারপর সেই সুরের সঙ্গে মিলেমিশে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল। এমন এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার, যা ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ হয়ে যেত।

বিহারের জন্ম। ছোটবেলা থেকেই গান। কত রাত জেগে গেছেন শারদা সিনহা। গান শেখা, গান পড়া, গানের সুর বোঝা, অবিশ্রান্ত সাধনায়ই কেটেছে তাঁর সারা জীবন। বিহারের লাল মাটি আর গাঙ্গেয় অববাহিকার সবুজে ঘেরা প্রকৃতি, এই দুটোই শারদার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর জীবন গানের সঙ্গে এতটাই জড়িত যে গানকে ছাড়া তিনি নিজেকে ভাবতেই পারেন না। প্রকৃতি আর গান মিলে তাঁর কণ্ঠকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে যেখানে পৌঁছাতে কোনও সাধারণ মানুষের কত সাধনা লাগে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।

শারদা শুধু একজন গায়ক নন, তিনি একজন গান রচয়িতাও। অসমীয়া লোকগান, বিহারি লোকগান ছাড়াও তিনি হিন্দি, বাজ্জিকা, ভোজপুরি, মৈথিলীতেও গান রচনা করেছেন। তাঁর রচিত অনেক গানই আজ দেশ-বিদেশের বহু মানুষের প্রিয় গান। শুধু গান নয়, তিনি নৃত্যও পারদর্শী। কিছু সময়ের জন্য তিনি স্টেজে নৃত্যও করেছেন। তবে শারদা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তাঁর গানের জন্যই।

শারদা শুধু ভারতের মধ্যেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গান গেয়েছেন। তাঁর গান গেয়ে তিনি বহু পুরস্কারও পেয়েছেন। তাঁর গানের জন্য ১৯৯১ সালে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক দেওয়া পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত হন। ২০০৬ সালে তিনি সঙ্গীত নাটক একাডেমি পুরস্কারেও সম্মানিত হন। তাঁর গান আজও লোককণ্ঠে গীত হয়। আজও মানুষ শারদার গান শুনে প্রেমে পড়ে, বিরহে কাঁদে, আনন্দে নাচে। শারদার গানে আছে সব। জীবনের সব রঙ আছে। তাই তাঁকে শুনলে মন ভাল হয়। জীবনকে উপভোগ করার ইচ্ছে জাগে। শারদার গান শুনে বোঝা যায়, জীবন কতটা সুন্দর।