কিশোরী লাল শর্মার গল্প: মৃত্যুর কোলেও অবিচল থাকা এক সৈনিক




সীমান্তে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন প্রাণের কষতি দেন আমাদের সৈন্যরা। তাদের নিয়ে গল্পকথা হয় অনেক। কিন্তু তাদের নিজেদের জীবন, দেশের জন্য যে নিঃস্বার্থ ত্যাগ, তা অনেকেই জানেন না। তেমনই এক সৈনিকের গল্প যিনি মৃত্যুর সম্মুখীন হলেও নিজের দায়িত্ব থেকে সরে আসেননি।

কিশোরী লাল শর্মার জন্ম

রাজস্থানের বিকাশ নগরে ১৯৪৫ সালের ১ঠা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন কিশোরী লাল শর্মা। শৈশবকাল থেকেই সাহসী ও দেশপ্রেমী ছিলেন তিনি। দেশের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার স্বপ্ন দেখতেন।

সেনাবাহিনীতে যোগদান

শিক্ষা শেষ করে ১৯৬৭ সালে রাজপুতানা রাইফেলসে যোগ দেন কিশোরী লাল। তাঁর সাহস ও মেধার কারণে তিনি শীঘ্রই একজন দক্ষ সৈনিক হিসেবে প্রমাণিত হন। বহু অভিযানে অংশ নিয়ে তিনি কমান্ডিং অফিসারের প্রশংসা অর্জন করেন।

১৯৭১ সালের যুদ্ধ

১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কিশোরী লাল শর্মা একটি রাইফেল কোম্পানির নেতৃত্ব দেন। চাকশী এলাকায় পাকিস্তানী বাহিনী একটি ব্যাটালিয়ন স্ট্রেংথ দিয়ে আক্রমণ চালায়। কিশোরী লালের কোম্পানি সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে নিযুক্ত ছিল।

যুদ্ধের তীব্রতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। পাকিস্তানী সৈন্যরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সজ্জিত ছিল। কিন্তু কিশোরী লাল এবং তাঁর সৈন্যরা দৃঢ়তার সাথে প্রতিরোধ করেন। তিনি নিজেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন, সাহস ও উৎসাহ দেন তাঁর সৈন্যদের।

মৃত্যু অবধি দায়িত্ব পালন

খুব শীঘ্রই পাকিস্তানী সৈন্যরা ভারতীয় অবস্থানে আক্রমণ করার জন্য এগিয়ে আসে। কিশোরী লাল তাঁর সৈন্যদেরকে আদেশ দেন পিছনে সরে যেতে এবং নিজেই সবার শেষে পিছু হটেন। দুর্ভাগ্যবশত, এদিকে একটি গর্নেড বিস্ফোরিত হয় এবং কিশোরী লাল গুরুতর জখম হন।

মৃত্যুর কোলে শুয়েও কিশোরী লাল তাঁর সৈন্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। তিনি তাঁদেরকে নির্দেশ দেন যুদ্ধ করা অব্যাহত রাখতে। তাঁর সাহসী নেতৃত্বে উৎসাহিত হয়ে ভারতীয় সৈন্যরা শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানী আক্রমণকে প্রতিহত করে।

সম্মান ও স্মৃতি

যুদ্ধে কিশোরী লাল তাঁর অসাধারণ সাহস ও শহীদের মর্যাদা প্রদর্শন করেন। তাঁকে মরণোত্তর "পরমবীর চক্র" দিয়ে সম্মানিত করা হয়, যা ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান।

আজ, কিশোরী লাল শর্মার নাম সর্বদা স্মরণ করা হবে একজন বীর যিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও নিজের দায়িত্ব পালনে অটল ছিলেন। তাঁর গল্প প্রতিটি ভারতীয়ের কাছে অনুপ্রেরণা যেন তাঁরা দেশের জন্য যা কিছু করতে হয় তাই করেন ভয় বা সংশয় ছাড়াই।

  • কিশোরী লাল শর্মা একজন দক্ষ সৈনিক ছিলেন যিনি সাহস ও উৎসাহের জন্য পরিচিত ছিলেন।
  • ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তিনি একটি রাইফেল কোম্পানির নেতৃত্ব দেন এবং দুর্ভাগ্যবশত শহীদ হন।
  • মৃত্যুর মুহূর্তেও কিশোরী লাল নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেন এবং তাঁর সৈন্যদের সাহস ও উৎসাহ দেন।
  • তাঁকে মরণোত্তর "পরমবীর চক্র" দিয়ে সম্মানিত করা হয়, যা ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান।
  • কিশোরী লাল শর্মার গল্প প্রতিটি ভারতীয়ের কাছে একটি অনুপ্রেরণা যেন তাঁরা দেশের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকেন।