গুড়ি পড়্বা: নববর্ষের উৎসব
হোলিকে বিদায় দিয়ে, গ্রীষ্মের দ্বারস্থলেই আমাদের কাছে আসে রঙিন আর আনন্দঘন গুড়ি পড়্বা। চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের প্রথম দিনে উদযাপিত এই উৎসব নতুন বছরের শুরুকে বরণ করে নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা বহন করে।
এই দিন, ঘরে ঘরে রান্না করা হয় বিশেষ বৈশাখী পিঠে-পুলি। নুন, ডাল আর তেল দিয়ে তৈরি পোনা বা গুড়ের সাথে খেজুরের রস মিশিয়ে তৈরি নিপট। পাশাপাশি, তৈরি হয় নারকেলের খণ্ড দিয়ে সাজানো সুস্বাদু পুলি।
রঙিন গুড়িগুলো দিয়ে উচ্ছ্বসিত খেলাও এই পর্বের একটি বিশেষ অংশ। বাচ্চারা আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে এই গুড়িগুলোকে নিজেদের ঘরের আঙিনায় ফেলে আর চিৎকার করে বলে, "গুড়ি পড়ে, দুর্বাসার পড়ে, ভগিনী সুখে থাকে।" এই খেলার মধ্য দিয়েই তাদের মনে শুভ কামনার বীজ বপন হয়।
হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, গুড়ি পড়্বাকে বিষ্ণুর মৎস অবতারের স্মরণ হিসেবে দেখা হয়। বিষয়ুক্ত সমুদ্র থেকে নারদ ও ব্রহ্মার প্রাণ ভয়ঙ্কর অসুর হায়গ্রীবের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন মৎস। তাই এই দিনে শত্রুর কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রার্থনা করা হয়।
বৌদ্ধ ধর্মেও গুড়ি পড়্বার গুরুত্ব রয়েছে। তারা এই দিনকে গৌতম বুদ্ধের জন্মদিন হিসেবে উদযাপন করে। তাই বৌদ্ধ মঠগুলোতে এই দিনে বিশেষ পূজা-অর্চনা ও শোভাযাত্রা হয়।
সামাজিকভাবে, গুড়ি পড়্বা নতুন বন্ধন গড়ে তোলার ও পুরনো বন্ধনগুলোকে আরও দৃঢ় করার সুযোগ। এই দিনে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা একে অপরের বাড়িতে যান, মিষ্টিমুখ খান আর আনন্দে সময় কাটান।
যুগ যুগ ধরে আমাদের সংস্কৃতিতে গুড়ি পড়্বা গভীর ভাবে গেঁথে আছে। আমাদের ইতিহাস, ধর্ম ও সামাজিকতায় এর একটি বিশিষ্ট স্থান রয়েছে। তাই আসুন, এই উৎসবকে আমরা সকলে মিলে আনন্দে ও উল্লাসে উদযাপন করি, নতুন বছরকে আহ্বান জানিয়ে।
"গুড়ি পড়ে, দুর্বাসার পড়ে, সবার ঘরে আনন্দ হোক।"