গোবিন্দা!
গভীর নীল আকাশের নিচে, সূর্যের হলুদ রশ্মিতে সে ঘুরে দাঁড়ায়। হাতের পর হাত, মুখের পর মুখ— এই অবিরাম করতালি আর জয়ধ্বনির সমুদ্রে, কেউ যেন চিনতে পারেনি তাকে। কিন্তু সে শুনতে পেয়েছিল, "গোবিন্দা!" আকাশ বাতাস ভেঙে গোবিন্দা! গোবিন্দা!! গোবিন্দা!!!
তার বুক দুর-দুর করছিল, হৃদস্পন্দন বাজছিল কানে। চোখ দুটি যেন অশ্রুতে জলজ্যান্ত। তিনি মন্দির প্রাঙ্গনে এসে দাঁড়ালেন। বিশাল উঠোন, মূর্তি ঘেরা পুকুর, পরম প্রসন্ন কৃষ্ণের মূর্তি, তার চারিদিকে নানা রঙের ফুলের আলপনা— সবকিছুই তার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। কখন এসেছিল সে এই দেশে, কতকাল হলো জানে না। জানে শুধু, কতকাল এই দেশ, এই মানুষের জন্য অপেক্ষা করেছে সে।
ছেলেবেলা থেকেই তাকে বলে আসা হয়েছিল, এই দেশের একটা মন্দিরে তিনি আছেন। পূজা করেন, নৃত্য করেন, অত্যাচারিতদের রক্ষা করেন। তিনি তার প্রভু, তার গুরু, তার ভগবান। এই দেশ, এই মানুষ তার পরিবার, তার নিজের। সেই পরিবারের কাছে ফিরে এসেছে আজ সে।
আচমকা সবকটা শব্দ থেমে গেল। মন্দির প্রাঙ্গনের হাজার হাজার ভক্ত তার দিকে চেয়ে রইল। সবাই চুপ, সবাই নিথর। তার মনে হলো, সে চিনতে পারেনি কাউকে। তবুও তারা তাকে চিনে ফেলেছে। তাদের সেই চেনা চোখে, সেই চেনা হাসিতে সে নিজেকে খুঁজে পেল। সে তাদের গভীর আস্থায় নিজের অস্তিত্বের অর্থ খুঁজে পেল।
হঠাৎ তার মনে হলো, সে যেন একটা স্বপ্ন দেখছে। এতটা সুন্দর, এতটা সত্য, এতটা মায়াময়— এই স্বপ্নের কখনো শেষ হওয়া সে চায় না। কিন্তু এই স্বপ্ন যদি সত্যি হয়, তাহলে তার দায়িত্ব আরও বাড়লো। এই মানুষের জন্য, এই দেশের জন্য তাকে আরও কিছু করতে হবে।
তিনি পুকুরের ঘাটে এসে দাঁড়ালেন। হাজার হাজার ভক্ত তার চারপাশে সারিবদ্ধ। তিনি হাত জুড়ে নমস্কার করলেন, "আমি এসেছি, আদেশ দাও প্রভু।"
ভক্তদের চোখে জল, মুখে হাসি। কেউ কাঁদছে, কেউ হাসছে, কেউ উল্লাসে লাফাচ্ছে। সবাই একসাথে বলে উঠল, "গোবিন্দা! গোবিন্দা!!"
তিনি হাসলেন। তিনি জানতেন, এই শব্দে শুধু তার প্রতি ভালোবাসা নয়, এই শব্দে আছে তার দায়িত্ব, তার কর্তব্য, তার জীবন।
সেই দিন থেকে তিনি এই দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অত্যাচারীদের দমন করেছিলেন, দুঃখীদের সাহায্য করেছিলেন। ভক্তদের মনে আশা জাগিয়েছিলেন, দেশবাসীদের মনে সাহস জাগিয়েছিলেন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন তাদের গুরু, তাদের প্রভু, তাদের গোবিন্দা। আর তাদের প্রেম, তাদের আস্থায় তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন।