গুরুচরণ সিং সোঢ়ী




আমার প্রিয় বন্ধুরা, আজকে আমরা সকলে এক অসাধারণ মানুষের কাহিনি শুনব, যিনি ধর্মীয় সহনশীলতা ও মানবতাবাদী মানসের এক অনন্য উদাহরণ। তাঁর নাম গুরুচরণ সিং সোঢ়ী, একজন সামাজিক কর্মী যিনি তাঁর জীবন ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রচার ও মানবিক কাজে উৎসর্গ করেছিলেন।

গুরুচরণ সিং সোঢ়ী ১৯২২ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশবটি ধর্মীয় সংঘাত ও বিভাজনের ঘটনাবহুল সময়ে কেটেছিল, যা তাঁর মনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে শান্তি ও বোঝাপড়া প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

ভারত বিভাজনের পর, সোঢ়ী পরিবারসহ ভারতে চলে আসেন। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং সামাজিক কাজে ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর সামাজিক কাজের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল পাকিস্তানী বন্দিদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে। তিনি তাঁদেরকে খাবার, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করতেন, তাদেরকে তাদের পূর্ব জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য সহায়তা করতেন।

সোঢ়ীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলির মধ্যে একটি ছিল "পাকিস্তান এক্সপ্রেস" নামে একটি বাস সেবা চালু করা। এই সেবা পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া পরিবারগুলির পুনর্মিলনে সহায়তা করে।
  • তাঁর তত্ত্বাবধানে, "পাকিস্তান এক্সপ্রেস" ১৯৭৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ৩০০০ এরও বেশি যাত্রা সম্পন্ন করে এবং ৩০,০০০ এরও বেশি মানুষের পুনর্মিলন ঘটায়।
  • সোঢ়ী ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সমস্ত ধর্মই মূলত একই লক্ষ্যের পথ, যা শান্তি, ভালবাসা এবং মানবিকতা।
  • তাঁর সামাজিক কার্যের জন্য, তিনি বহু পুরস্কার এবং স্বীকৃতি পেয়েছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পুরস্কার।
  • গুরুচরণ সিং সোঢ়ী ২০২২ সালের ২৪ শে জুনে লাহোরে তাঁর প্রিয় শহরে মারা যান। তিনি ৯৯ বছর বয়সী হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু ভারত ও পাকিস্তান সহ বিশ্বব্যাপী শান্তিকামীদের কাছে এক বড় ক্ষতি। তিনি ধর্মীয় সহনশীলতা, মানবিকতা এবং শান্তির জন্য তাঁর অবিচ্ছিন্ন কাজের জন্য স্মরণীয় থাকবেন।

    তার কাহিনি আমাদেরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়, তা হল:
    "সকল ধর্মে যে প্রেম ও সহনশীলতা রয়েছে, সেগুলিই আমাদেরকে একত্রিত করে।"
    "আসুন আমরা শান্তির পথ গ্রহণ করি এবং একে অপরের সাথে সৌহার্দ্যে বাস করি।"

    আমার প্রিয় বন্ধুরা, গুরুচরণ সিং সোঢ়ীর জীবন ও কাজ আসুন আমাদের সকলকে ধর্মীয় সহনশীলতা ও মানবতাবাদী আদর্শের জন্য কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। আসুন আমরা তাঁর উত্তরাধিকারকে জীবন্ত রাখি এবং বিশ্বকে একটি শান্তিপূর্ণ এবং সুন্দর স্থান তৈরি করি।