গুরুবায়ুর অম্বলানদায়ী




আমি ছোটবেলায় আমার মা-বাবার সাথে প্রথম গুরুবায়ুর অম্বলানদায়ে গিয়েছিলাম। আমাকে দেখে তো সেই প্রথম। এখনও মনে আছে সেই দৃশ্যটা। আমার বয়স তখন দুই তিন হবে। মায়ের কোলে করে মন্দিরে ঢুকতে আমার খুব ভয় হচ্ছিল। মন্দিরের দরজায় পা রাখার সাথে সাথে বুকের ভেতরে একটা জোরালো ঠুকর খেয়েছে। তখনও দুধ খাইতাম। কিন্তু সেদিন কেমন জানি মায়ের দুধ খেতে ইচ্ছা করছিল না। মনে হচ্ছিল, মন্দিরের ভেতরে যা দেখব, তাতে আমার অনেক ভয় লাগবে। মন্দিরের ভেতরে ঢুকতেই বুকের ভয়টা আরও বেড়ে গেল। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত দীর্ঘ রুমটার ভেতরে হাজার হাজার লোকের ভিড়। তার মাঝখান দিয়ে যেতে গিয়ে মনে হচ্ছিল, যেন সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মা আমায় জোর করে নিয়ে যাচ্ছে। সবাইকে ঠেলেঠুলে ঢুকলাম ভিতরে। ভয়ের কারণে কান্না আটকে রাখতে পারছিলাম না। মায়ের সাথে ঢুকেই কেঁদে ফেললাম। কাঁদতে কাঁদতে মা দুধ খাওয়ার চেষ্টা করল। আর আমি সেই দুধই মুখের বাইরে ফেলে দিলাম। মা আমায় আগলে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি চুপ করছি না। তখন একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। আমায় আগলে রাখা মায়ের হাতের উপর হঠাৎ কারা ঠান্ডা হাত ছুঁয়ে গেল। মা তো অবাক! আমিও হতবাক। হাতটা আমার মাথার উপর দিয়ে সরল। মাথার উপর একটা ঠান্ডা অভিষেকের মতো। সেই অভিষেকের সাথে সাথে আমার মনে হল, যেন হঠাৎ বুকের ভয়টা দূর হয়ে গেল। মনে হচ্ছিল যেন আমার অদৃশ্য বন্ধু আমায় সাহস দিচ্ছে। সেই থেকে আজ অবধি আমার সেই অম্বলানদায়ের উপর অগাধ বিশ্বাস। আমি বিশ্বাস করি যে, আমার শৈশবের সেই অভিষেকই আমাকে জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে অনেকবার সাহস দিয়েছে।