গালা প্রেসিশন ইঞ্জিনিয়ারিং আইপিও




আমাদের দেশে শেয়ারবাজারে সবেচেয়ে বেশি যা দেখা যায় তা হলো আইপিও (প্রাথমিক শেয়ার বিক্রি)। গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে এই যে কোম্পানিগুলো আইপিও নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে বাজারে, তাদের অধিকাংশই হলো একটি নির্দিষ্ট শিল্পের অন্তর্গত। অর্থাৎ শিল্পটি সময়ের চাহিদা মতো উপযোগী, প্রয়োজনীয়। রিয়েল এস্টেট, এফএমসিজি, ফিনটেক, ফার্মাসিউটিক্যাল ইত্যাদি। সম্প্রতিও সেই তালিকায় আরও একটি শিল্প যুক্ত হয়েছে। আর সেটি হলো ম্যানুফ্যাকচারিং। এই শিল্পের অন্তর্গত বেশ কিছু কোম্পানি ইতিমধ্যেই আইপিও এনেছে।
দেশে সবচেয়ে বেশি সেক্টরের কোম্পানিগুলি এই সূচকে তালিকাভুক্ত। তাই বিএসইতে শেয়ারপ্রতি দাম (এসএইচপি) ১,০০০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হয়। কিন্তু আমাদের দেশের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতটি এখনও বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তাই এই খাতের কোম্পানিগুলির এসএইচপি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে টিপিএল প্লাস্টেক্স, ভিঈএসএন এন্টারপ্রাইজেস, ইম্প্যাক্ট ব্লোমোল্ডিংস, ইউনাইটেড নিডলস অ্যান্ড গ্যালান্ট ইন্ডাস্ট্রিজ।
তবে এই তালিকায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় নামটি হলো গালা প্রেসিশন ইঞ্জিনিয়ারিং। কারণ, এই কোম্পানিটি একটি বিশেষায়িত ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট। অটোমোটিভ, অ্যারোস্পেস এবং মেডিক্যাল সরঞ্জামের খাতের জন্য এই কোম্পানিটি স্পেসিফিক ক্রিটিক্যাল কম্পোনেন্ট তৈরি করে। এছাড়াও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাপিটাল গুডসের জন্য হাই প্রিসিশন কম্পোনেন্টও এই কোম্পানি তৈরি করে।
সম্প্রতি গালা প্রেসিশন ইঞ্জিনিয়ারিং আইপিও এনেছে। ১,৭৪৫ কোটি টাকার আইপিওটিতে ৩১ অক্টোবর অবধি সাবস্ক্রিপশন করা যাবে। গালা প্রেসিশন ইঞ্জিনিয়ারিং অটোমোটিভ খাতে ছোট এবং মাঝারি আকারের এন্টারপ্রাইজগুলির জন্য কম্পোনেন্ট সরবরাহ করে। কোম্পানির ক্লায়েন্টে রয়েছে টাটা মোটরস, অ্যাশোক লেল্যান্ড, মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রা, আলফা লেভাল, ইউনাইটেড নিডলস, টেকম্যান, নভেল্টি, সিরাম ইনস্টিটিউট, স্টিমার মেডিক্যাল ইত্যাদি।
কোম্পানিটির অটোমোটিভ সেগমেন্ট থেকে আয়ের অনুপাত সবচেয়ে বেশি। অতীতের তথ্য অনুযায়ী, এটি ৭০-৭৫ শতাংশ। তবে, কোম্পানিটির পরিকল্পনা রয়েছে মেডিক্যাল সেগমেন্ট থেকে আয়ের অনুপাত বাড়ানোর। কারণ, বিশ্বে দীর্ঘমেয়াদিভাবে মেডিক্যাল সেগমেন্টের বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে।
এছাড়াও কোম্পানিটির প্রধান ফোকাস বর্তমানে বৈশ্বিক বাজারের দিকে। বর্তমানে কোম্পানির রপ্তানি আয় হলো মোট আয়ের প্রায় ৫ শতাংশ। তবে আগামী ৩-৫ বছরে এটিকে ১৫-২০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানির। এর জন্য ইতিমধ্যেই মরক্কো এবং রোমানিয়ায় কোম্পানিটি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
গালা প্রেসিশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যা বিনিয়োগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক তা হলো, কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা। গালা ফ্যামিলি এই কোম্পানিটি চালায় এবং কোম্পানির পেশাদার ম্যানেজমেন্ট টিমও বেশ শক্তিশালী। কোম্পানির রাজস্ব এবং আয় প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেয়ারপ্রতি কর আগের আয়ের তুলনায় কোম্পানির শেয়ারটি মূল্যায়িত হচ্ছে ২৫ টাকায়। এটি আমার নজরে বেশ রিজনেবল। তাই সাম্প্রতিক মার্কেটে ডাউনট্রেন্ড চলা সত্ত্বেও এই আইপিওটিতে বিনিয়োগের সুপারিশ করব।