শীতের শেষদিক, হাতে মার্চের শুরু। এরই মধ্যে চলে গেল একুশ গেল। মন তখনও উৎসব কাটানোর আনন্দে উদ্বেল, আর চোখ আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা অপেক্ষায়। কারণ এই মাসেই পূর্ণিমার আগে বিরল এক ঘটনা ঘটবে, চাঁদে লাগবে গ্রহণ।
চাঁদের গ্রহণ ঠিক কিভাবে ঘটে? জ্যোতির্বিদরা বলেন, যখন পৃথিবী, সূর্য এবং চাঁদ এক সরলরেখায় অবস্থান করে, তখন পৃথিবীর ছায়া পড়ে চাঁদের উপর। যার ফলে চাঁদ পুরোপুরি বা আংশিকভাবে সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত হয় এবং অন্ধকার হয়ে যায়।
আসল কথা হলো, এই চাঁদের গ্রহণটা ছিল একটু অন্যরকম। কিভাবে? কারণ এই গ্রহণ দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হয়েছিল এবং চাঁদটি পৃথিবীর প্রশস্ততম ছায়াতে প্রবেশ করেছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা প্রায় 580 বছর পর দেখা গেল।
আমাদের দেশে তো বটেই, সারা বিশ্বেই এই ঘটনার জন্য প্রচুর উত্তেজনা ছিল। মানুষ ছাদ আর উঁচু স্থানে জমা হয়েছিল গ্রহণ দেখার জন্য। আমাদের অপেক্ষাও ছিল তুঙ্গে।
সন্ধ্যাবেলা আকাশ লাল হতে শুরু করল। তারপর, ধীরে ধীরে আকাশের এক পাশে কালো হতে শুরু করল। সেই কালো দাগ যেন আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করল। হঠাৎ করেই সেই কালো দাগের মধ্যে থেকে উঁকি দিল একটা লালচে আভা। সেটাই ছিল চাঁদ।
যে দৃশ্যটা দেখছিলাম সেটা ছিল অবিশ্বাস্য। একেবারে স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছিল চাঁদের কালো হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া। যেন কেউ ধীরে ধীরে চাঁদের বুকে কালি মেখে দিচ্ছে। প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে চলল এই প্রক্রিয়া।
অনেকবার অনেক গ্রহণ দেখেছি। কিন্তু এমন একটা দৃশ্য কখনও দেখিনি। মনে হচ্ছিল যেন চাঁদ অস্ত যাচ্ছে। কিন্তু আবারও সূর্যের আলোতে সে চকমক করে উঠলো। ফিরে এলো ভরা জৌলুসে চাঁদ। চাঁদের সেই কালো মেঘ যেন কিছুক্ষণের জন্য স্বপ্ন হয়ে গেলো।
এই গ্রহণ ছিল শুধুমাত্র একটি আকাশের দৃশ্য নয়। এ ছিল এক অভিজ্ঞতা। এমন এক অভিজ্ঞতা যা সারাজীবন মনে থাকবে।