চন্দ্র হাস রহস্যে প্রাণ সঞ্চার




শৈশবের স্মৃতির পাতায় যদি তুলে ধরি, তবে দেখতে পাব, আমাদের জন্য আনন্দের অপেক্ষা থাকতো শনিবার আর ছুটির দিনগুলির জন্য। কারণ, সেদিনই প্রচারিত হতো "চন্দ্রহাস রহস্য". দূরদর্শনে প্রচারিত এই সিরিয়ালটি প্রতি শনিবার বিকেলে আমাদের ঘরে হাসির আওয়াজ, উত্তেজনার মাত্রা যে বাড়িয়ে দিতো, এখন আর কল্পনাই করা যায় না। সিরিয়ালের কিছু কিছু দৃশ্য এখনও চোখে ভাসে। এখন যদি ভেবে দেখি, তাহলে সত্যি, মাঝেমধ্যে মনে হয় আমাদের শৈশব কাটিয়েছে এই সিরিয়ালটি। আজকের আধুনিক প্রজন্মের কাছে টিভি বা সিরিয়ালের আকর্ষণ হয়তো এতটা নেই। কিন্তু আমাদের সেই প্রজন্মের কাছে, সিরিয়াল মানেই আনন্দ, উৎসাহের। সেদিন হয়তো আমরা বুঝিনি, তবে এই সিরিয়ালটি আমাদের মনে যে কতটা জায়গা করে নিয়েছিল, বছরের পর বছর কেটে যাওয়ার পরেও সেটা এখনও আমাদের মনে পড়ে।
এই সিরিয়ালের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য বা বলতে পারি, আবেদন ছিল, এর চরিত্রগুলি। যেভাবে সিরিয়ালের চরিত্রগুলি তাদের অভিনয়ের মাধ্যমে প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন, ভোলা কি সম্ভব? সেই হোলি বা ডাকু মঙ্গল সিংহ, কিংবা ডাকাতের রাজা চন্দ্রহাস, আর চন্দ্রপ্রভার চরিত্রে অভিনয় করা বিদ্যা বালন। এই সিরিয়ালের প্রতিটি চরিত্রই আমাদের মনে আজও এতটা জায়গা করে নিয়েছে যে, আজও যদি কোন বন্ধুর সঙ্গে এই সিরিয়ালের গল্প উঠে আসে, তাহলে কেমন যেন পুরনো স্মৃতি হাতড়ে বেরিয়ে আসে।
যারা ৯০ এর দশকের শুরুর দিকে জন্ম নিয়েছে, তাদের কাছে এই সিরিয়ালটি আজও তাদের মনে ভেসে ওঠে। অনেকেরই কাছে শৈশবের আনন্দ জড়িয়ে রয়েছে এই সিরিয়ালের সঙ্গে। এক সময়ের জনপ্রিয় এই সিরিয়ালটি নির্মিত হয়েছিল ফ্যান্টাসি উপন্যাসের জনক দীননাথ কৌশিকের উপন্যাস অবলম্বনে। রবিবার দুপুর ১টার সময় দূরদর্শনে এই সিরিয়াল প্রচারিত হতো। ৫২টি পর্বের এই সিরিয়ালটি তৈরি হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। তবে মাত্র দশটি পর্বই দর্শকরা দেখতে পান। তখন এই সিরিয়ালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
তবে এমন পরিস্থিতিতেও এই সিরিয়ালটি এতটা জনপ্রিয় হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের কাছ থেকে চাহিদা বাড়তে থাকে। পরে ১৯৯৭ সালে এই সিরিয়ালটি আবার প্রচারিত হয়। তবে এবার প্রত্যেকটি পর্বের সময়কাল কমিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে পুরো সিরিয়ালটি যেমন সম্প্রচার করা সম্ভব হয়, তেমনি দর্শকদেরও আরও বেশি আনন্দ পাওয়ার সুযোগ হয়। প্রায় তিন বছর ধরে এই সিরিয়ালটি দূরদর্শনে প্রচারিত হয়।
সিরিয়ালটি শেষ হয়ে গেলেও, আজও দর্শকদের মনে এই সিরিয়ালটি ভাবান্তরিত হয়ে যায়। তার কারণ, এই সিরিয়ালের চরিত্রগুলি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল, দেখলে মনে হয় যেন এই চরিত্রগুলি এখনও আমাদের মাঝে রয়ে গেছে। আমাদের স্মৃতিতে এমনভাবে মিশে গেছে যে, দশক পেরিয়ে গেলেও, যদি এই সিরিয়ালের কোনও পর্ব দেখানো হয় কहीं, তাহলে আমরাও নিজেদের আটকাতে পারি না।