একটি নাম শুনেছিলাম, শুনেছিলাম। অমিত পানশিল নামে একজন সাইক্লিস্ট। সাইকেলে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। অনেক দূরদূর পৌঁছেছেন সাইকেল নিয়ে। শুনেছিলাম কিন্তু বিশ্বাস করিনি। কারণ আমার জানামতে প্রতি সাইক্লিস্টই অনেক দূরে পৌঁছায় তার সীমানার শেষ দিকটায়। একা।
গত কয়েকদিন প্রায় রাত্তিরে দু'টো সাইকেল একসঙ্গে ঘুরতে দেখছিলাম কলকাতা শহরের রাস্তায়। সাইক্লিস্ট দুটি। একটা অপেক্ষাকৃত বয়স্ক আর একটা তরুণ। বয়স্ক সাইক্লিস্টটি এত সুন্দরভাবে সাইকেল চালাচ্ছিলেন যে চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না। তিনি মনে হচ্ছিলেন সারাজীবন সাইকেল নিয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন। দু'টো সাইকেলই ঝকঝক করছিলো আর তাদের আলোও যেন অন্যদের সাইকেলের চেয়ে বেশি আলো দিচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো এই দু'টো সাইকেল আলোর উৎস নিজেই! কাছে আসার পর দেখলাম বয়স্ক সাইক্লিস্টটিই অমিত পানশিল।
অমিত পানশিলের পাশেই সাইকেল চালাচ্ছিলেন এক তরুণ, তার নাম রাহুল নাথ। অমিত পানশিল বছর পঞ্চান্নের হলেও চেহারা কিন্তু তেতাল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মতো। এ যেন সাইকেলের কৃপা। রাহুল নাথ হয়তো ত্রিশ বছরেরও কম। তিনি শুনেছেন অমিত পানশিলের কথা। সাইকেল নিয়ে দূর-দূরান্তে যাওয়া তার স্বপ্ন ছিলো। তাই অমিত পানশিলের কাছে এসে শুরু করলেন সাইকেলিং। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অমিত পানশিলের অনেক কাছের হয়ে উঠলেন। অমিত পানশিলও অপেক্ষা করছিলেন এমন একজনের জন্য যার সাথে তিনি সাইকেল চালিয়ে ভারতমাতাকে ঘুরে দেখবেন।
অমিত পানশিলের সাথে রাহুল নাথের অনেক ট্যুরে গিয়েছি। তাদের সাইকেলের গতি আর বেগ সবকিছুই যেন দারুণ। রাস্তায় চলেছে আর গান গাইছে। কোন অচেনা মানুষ তাদের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেন, "এত দূর সাইকেল নিয়ে যাচ্ছো কেন?" তখন তাদের উত্তর হয়, "ভারতমাতার বুকে সাইকেলের চাকায় দু'টো আঁচড় লাগাবার জন্য।"