চে গেভারা




চে গেভারা, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বিখ্যাত বিপ্লবী, যার চেহারা আজও বিশ্বজুড়ে দুঃসাহসী ও বিদ্রোহের প্রতীক। আর্জেন্টিনার এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এই চিকিৎসক কিভাবে একজন মার্ক্সবাদী গেরিলা যোদ্ধায় পরিণত হলেন, তার গল্পটি অনেক অনুসন্ধান ও আলোচনার বিষয়।
গেভারা চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করার জন্য লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ করার সময় দক্ষিণ আমেরিকার দারিদ্র্য ও অন্যায়-অত্যাচারের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করেন। তিনি দেখেছিলেন যে কীভাবে একগুচ্ছ স্বার্থান্বেষীরা অধিকাংশ জনগণকে দমন ও শোষণ করছে, এবং এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার দৃঢ় সংকল্প তাঁর মনে জাগে।
গেভারা কেবল একজন তাত্ত্বিক বিদ্রোহী ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত দক্ষ গেরিলা যোদ্ধা। কিউবার বিপ্লবে তার ভূমিকা অতুলনীয় ছিল, যেখানে তিনি ফিদেল ক্যাস্ট্রোর পাশে লড়াই করেছিলেন এবং বটিস্টার স্বৈরশাসন উৎখাতে সহায়তা করেছিলেন। কিউবার বিজয়ের পরে, গেভারা সেখানে নেতৃস্থানীয় পদে কাজ করেন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করেন।
কিউবার পরে, গেভারা কঙ্গো ও বলিভিয়ায় বিপ্লবী আন্দোলনে সহায়তা করার জন্য প্রস্থান করেন। যদিও তাঁর এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি, তবে তাঁর বীরত্ব, ত্যাগ এবং চূড়ান্ত আত্মত্যাগ অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গেভারা নিজেই এক কালজয়ী সৃষ্টি। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, অবিচল আদর্শবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তাঁর নিরলস লড়াই বিশ্বজুড়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তিনি একজন বিপ্লবী নেতা, একজন আইকনিক ব্যক্তিত্ব এবং একজন সত্যিকারের কিংবদন্তি যাঁর গল্প আজও অনুষ্ঠানগুলোর অনুপ্রাণাদায়ী ভাষণ দেওয়া থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র ও সাহিত্যে বলা হচ্ছে।
গেভারার জীবন থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা শিখতে পারি। প্রথমত, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সামনে আসার গুরুত্ব। গেভারা নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে ত্যাগ করেছিলেন অন্যদের দুঃখ-কষ্ট দূর করার জন্য। দ্বিতীয়ত, আদর্শবাদ এবং বিশ্বাসের শক্তি। গেভারা সবসময় বিশ্বাস করতেন যে একটি ভালো বিশ্ব সম্ভব, এবং তিনি সেই বিশ্বাসের জন্য লড়াই করতে ইচ্ছুক ছিলেন। তৃতীয়ত, আত্মত্যাগ এবং বীরত্বের মূল্য। গেভারা নিজের দেশ, নিজের পরিবার এবং নিজের জীবন পর্যন্ত আত্মত্যাগ করেছিলেন একটি ভালো বিশ্ব তৈরির জন্য।
চে গেভারা একজন জটিল এবং বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর পদ্ধতির সমালোচনা করা হয়েছে, এবং তাঁর কিছু কর্মকে নিন্দনীয় বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁর নিঃস্বার্থতা, তাঁর সাহস এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর অবিচল সংগ্রাম অনস্বীকার্য। তিনি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বিখ্যাত বিপ্লবীদের মধ্যে একজন, এবং তাঁর উত্তরাধিকার আজও মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।