জওহরলাল নেহেরুঃ একজন মানবতাবাদী রাজনীতিবিদ এবং স্বপ্নদ্রষ্টা




ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ছিলেন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি তাঁর আদর্শবাদ, আন্তর্জাতিকতা এবং দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালবাসার জন্য স্মরণীয়। তিনি “প্রফুল্ল ভারতের শিল্পী” হিসাবে পরিচিত ছিলেন, যিনি একটি আধুনিক, স্বাধীন এবং সমৃদ্ধ ভারতের স্বপ্ন বুনেছিলেন।
নেহেরু ১৮৮৯ সালের ১৪ই নভেম্বর উত্তরপ্রদেশের অ্যালহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোতিলাল নেহেরু ছিলেন একজন বিশিষ্ট আইনজীবী এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা। নেহেরুর শৈশব অভিজ্ঞতা ছিল সুখী এবং সুবিধাজনক। তিনি হ্যারো এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখানে তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
১৯১২ সালে ভারতে ফিরে আসার পর নেহেরু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। তিনি দ্রুত স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন নেতা হয়ে ওঠেন এবং তাঁর আদর্শবাদ এবং ব্রিটিশ শাসনের প্রতি বিরোধিতার জন্য পরিচিত হন। নেহেরু ১৯২৯ সালে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৩০ সালে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন।
ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পর নেহেরু ১৯৪৭ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি ১৭ বছর এই পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং এই সময়ের মধ্যে ভারতের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেন। নেহেরু একজন দৃষ্টিশক্তিমান নেতা ছিলেন যাঁর আন্তর্জাতিকতা এবং অশোকচক্রের নীতিগুলো একটি আধুনিক এবং উन्नত ভারত গড়ে তুলতে সহায়তা করেছিল।
নেহেরু ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে নিরপেক্ষতার পক্ষে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ভারতকে বিশ্ব রাজনীতিতে একটি স্বাধীন ভূমিকা নিতে হবে এবং কোনও প্রধান শক্তির সাথে জোটবদ্ধ হওয়া উচিত নয়। নেহেরুর নিরপেক্ষতা নীতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি মূলনীতি হিসাবে রয়ে গেছে।
নেহেরু শিক্ষা এবং সামাজিক উন্নয়নেরও একজন দৃঢ় সমর্থক ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ভারতের শিক্ষিত এবং সুস্থ নাগরিক ছাড়া উন্নতি করা সম্ভব নয়। নেহেরুর অধীনে ভারত সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে।
নেহেরুর ব্যক্তিগত জীবন বিতর্ক ছাড়া ছিল না। তাঁর স্ত্রী কমলা কাউলের ১৯৩৬ সালে মৃত্যু হয় এবং তাঁদের একমাত্র সন্তান ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠেন। নেহেরুর কিছু সম্পর্কের বিষয়েও গুঞ্জন ছিল, তবে তিনি সর্বদা একজন নিষ্ঠাবান স্বামী এবং পিতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
২৭ মে, ১৯৬৪ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নেহেরুর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যু ভারতের জন্য একটি বড় ক্ষতি ছিল এবং তাঁকে দেশের সবচেয়ে সম্মানিত নেতাদের একজন হিসাবে স্মরণ করা হয়।
নেহেরু একজন দূরদর্শী নেতা ছিলেন যাঁর আদর্শবাদ এবং দেশের প্রতি ভালবাসা আজও ভারতবাসীদের অনুপ্রাণিত করে। তাঁর লেখা এবং বক্তৃতাগুলি এখনও জনপ্রিয় এবং তাঁর মতাদর্শ ভারতের রাজনৈতিক এবং সামাজিক জীবনে গভীরভাবে প্রভাব রেখে চলেছে।