জেসাস




আপনি কি জানেন যে লোকটির নাম যিনি খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে পুনরুত্থিত হয়েছেন এবং জীবিত আছেন, তিনি ছিলেন একজন ইহুদি? হ্যাঁ, আপনি ঠিক পড়েছেন! জেসাস ক্রাইস্টের জন্ম ইহুদি পরিবারে। আজ আমরা এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।

জেসাসের জন্ম

খ্রিস্টীয় ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করে যে, জেসাস ক্রাইস্ট ইহুদি মেয়ে মেরির পেটে ঈশ্বরের আত্মার প্রভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিছু খ্রিস্টীয় গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মেরি এক সন্ন্যাসী জীবনযাপন করছিলেন, কিন্তু দুত হেবেলের মাধ্যমে তাকে বলা হয় যে, তিনি ঈশ্বরের পুত্রকে জন্ম দেবেন। যদিও মেরির সঙ্গে সেই সময় জেসাসের পালক পিতা জোসেফের বাগদান হয়েছিলো, জোসেফও বিশ্বাস করেন এই বিষয়টি এবং মেরিকে বিয়ে করে জেসাসকে নিজের ছেলে হিসেবে গ্রহণ করেন। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে, এই সমস্ত ঘটনা একটি আশীর্বাদ হিসেবে ঘটেছে। কারণ, ঈশ্বরের নির্দেশে পুরাতন নিয়মের এক ভবিষ্যদ্বাণী পূরণ হয়, "একজন কুমারীই একটি সন্তানকে জন্ম দিবে।"
ধারণা করা হয় যে, জেসাসের জন্ম ১ খ্রীষ্টাব্দে ইজরাইলি শহর বেথলেহেমে হয়েছিলো। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, তিনি এক গোয়াল ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে, তাঁর জন্মের সময় স্বর্গদূতেরা পালকদের কাছে গুড নিউজ নিয়ে এসেছিলেন, আর আকাশে একটি তারা জ্বলে উঠেছিলো যা জেসাসের জন্মের খবর জানান দিচ্ছিলো। সেই সময় কিছু পূর্বদেশী পুরুষ তারার আলো অনুসরণ করে সেখানে এসেছিলেন, যাদেরকে আমরা আজও তিন বুদ্ধিমান হিসেবে চিনি। তারা জেসাসকে দেখে উপহার দিয়ে যান।

জেসাসের শৈশব ও যৌবন

সেন্ট ম্যাথিউ এবং সেন্ট লুকের গসপেল অনুযায়ী, জেসাসের শৈশব কেটেছিলো সেখানকার এক গ্রাম নাজারেথে। তাঁর পালক পিতা জোসেফ একজন কাঠুরে ছিলেন এবং মেরি ঘরের কাজ করতেন। জেসাসেরও কিশোর বয়সে জোসেফের সাথে কাঠুরের কাজ করতেন বলে জানা যায়। বাইবেলে জেসাসের শৈশব এবং যৌবনের সম্পূর্ণ বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে ১২ বছর বয়সে তাঁর একটি ঘটনার কথা বলা হয়েছে। একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য তাঁর পরিবার যিহুদিয়ার জেরুজালেম শহরে গিয়েছিলো। কিন্তু ফেরার সময় জেসাস হারিয়ে যান। সেই সময় তাঁর মা এবং জোসেফ খুঁজতে গিয়ে জেসাসকে মন্দিরে খুঁজে পান। সেখানে তিনি ধর্মীয় আচার্যদের সাথে কথা বলছিলেন।

জেসাসের শিক্ষা

জেসাস ৩০ বছর বয়সের পর থেকে তাঁর ধর্মপ্রচার শুরু করেন। সেই সময় তিনি ইহুদিয়ার বিভিন্ন শহর ও গ্রাম ঘুরে ঘুরে শিক্ষা দেওয়া শুরু করেন। তিনি মানুষকে ঈশ্বরের রাজ্যের কথা বোঝাতেন এবং বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনাও ঘটিয়েছিলেন বলে জানা যায়। জেসাস তাঁর শিক্ষায় মানুষকে ভালোবাসার কথা বলেছেন, ক্ষমা করার কথা বলেছেন এবং দুঃস্থদের প্রতি যত্ন নেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, ঈশ্বর সবার পিতা এবং আমরা সবাই ভাইবোন। তিনি মানুষকে একটি সুন্দর জগৎ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তাঁর শিক্ষা আজও মানবসভ্যতার অনুসরণীয়।

জেসাসের মৃত্যু ও পুনরুত্থান

জেসাস ক্রাইস্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থান খ্রিস্টানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে, জেসাস তাঁর শিক্ষার জন্য অনেক প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন এবং সেই সময়কার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা ভয় পেয়ে ওঠেন। এই কারণে ধর্মীয় নেতারা তাঁকে আটক করেন এবং মৃত্যুদন্ড প্রদানের জন্য রোমান গভর্নর পনটিয়াস পিলাতের কাছে তাঁকে সোপর্দ করেন। পিলাত শেষপর্যন্ত জেসাসকে ক্রুশে বিদ্ধ করে মৃত্যুদন্ড দেন।
খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে, জেসাস তাঁর মৃত্যুর পর তিন দিন পর পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। তাঁর কিছু অনুসারী তাঁকে বেশ কয়েকবার দেখেছিলেন এবং তিনি তাঁদের মাঝে আরও ৪০ দিন অবস্থান করেছিলেন। এরপরে তিনি স্বর্গে আরোহণ করেন। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে, জেসাসের এই কুরুশকাষ্ঠে মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের ফলে মানুষেরা তাদের পাপ থেকে মুক্তির সম্ভাবনা পায়।

জেসাসের প্রভাব

জেসাস ক্রাইস্টের জীবন এবং শিক্ষা আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের উপর অত্যন্ত প্রভাব রয়েছে। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে, তাঁর মৃত্যু এবং পুনরুত্থান আমাদের জন্য অনন্ত জীবনের আশা নিয়ে এসেছে। তাঁর শিক্ষা আজও মানুষকে সাহস, প্রেরণা এবং ভালোবাসার বার্তা দেয়। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, জেসাস ক্রাইস্টের নামে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য গির্জা এবং মিশনারি দল গড়ে উঠেছে। এই গির্জা এবং মিশনারি দলগুলি মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছে।

উপসংহ