ট্যুশন




আজকাল “ট্যুশন” শব্দটা শিক্ষাজগতে অত্যন্ত পরিচিত। শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যক্রমের পাঠ্যসূচির বাইরে বিষয়টি বোঝার জন্য নিজেদের প্রয়োজন বা অভিভাবকদের আদেশে অতিরিক্ত কোচিং নেওয়ার প্রথাটিই হচ্ছে ট্যুশন।
প্রাথমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সবস্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ট্যুশন দেওয়া হয়ে থাকে। সাধারণতঃ শিক্ষক বা বিষয় বিশেষজ্ঞগণ নিজের বাড়িতে কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ট্যুশন দিয়ে থাকেন। *আবার অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা নিজস্ব সুবিধামতো ঘরে বসেই অনলাইনে ট্যুশন গ্রহণ করেন।*
বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা ট্যুশনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। *এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো পাঠ্যক্রমের বিষয়গুলো ক্লাসে ভালোভাবে বুঝতে না পারা।* অনেক সময় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত হলেও শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষা দেওয়া বিষয়গুলো তাদের কাছে কঠিন মনে হয় কিংবা তারা বিষয়টিকে সঠিকভাবে বুঝতে পারে না। ফলে, তারা অন্য কোনো উপায় খোঁজে। আর এই ক্ষেত্রেই ট্যুশন তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো ও সহজ সমাধান হিসেবে দেখা দেয়।
শুধুমাত্র পাঠ্যক্রমের বিষয় বোঝার জন্যই নয়, কিছু শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের প্রতিভাকে আরো জাগিয়ে তোলার জন্যও ট্যুশন নেয়। যেমনঃ কেউ হয়তো সঙ্গীতের শিক্ষা নিচ্ছে বা কেউ হয়তো চিত্রাঙ্কন শিখছে। এসব বিষয়গুলো কেউ কেউ শখের বসে শেখে। আবার অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা এসব বিষয়গুলো নিজেদের কর্মজীবনের জন্যই শিখছে।
ট্যুশন প্রথায় শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের উপকারিতা নেই, এই প্রথার কারণে শিক্ষক অথবা বিষয় বিশেষজ্ঞরাও উপকৃত হন। *একজন শিক্ষক ট্যুশন গ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের সরাসরি তাদের সমস্যা বা কোনো দুর্বলতা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী তাদের সঠিক উপায়ে পাঠদান করতে পারেন।* ট্যুশনের কারণে শিক্ষকরা আর্থিকভাবেও লাভবান হন।
বর্তমানে ট্যুশন প্রথা শহুরে এবং গ্রামীণ উভয় এলাকাতেই ব্যাপকভাবে প্রচলিত। শুধুমাত্র অভিজ্ঞ শিক্ষকরাই নয়, অনেক কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও নিজেদের পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু অর্থ উপার্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের ট্যুশন দিয়ে থাকে।
তবে, ট্যুশন প্রথা নিয়েও কিছু নেতিবাচক দিক আছে। *যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হওয়া।* ট্যুশন ফি সাধারণতঃ প্রতিষ্ঠানভেদে এবং শিক্ষকভেদে পরিবর্তিত হয়। অনেক সময়ই অভিভাবকদের জন্য নিজেদের সন্তানদের জন্য সঠিক ট্যুশন শিক্ষক খুঁজে বের করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আবার, ট্যুশনের জন্য প্রতিদিন অনেক সময় ব্যয় হয়। ফলে, শিক্ষার্থীরা অনেক সময় নিজেদের পছন্দের কাজ বা অন্যান্য সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে না।
যদিও ট্যুশন প্রথা নিয়ে কিছু নেতিবাচক দিক আছে, তবুও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন পাঠ্যসূচিকে বোঝায় সহায়ক হওয়া থেকে শুরু করে তাদের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করার ক্ষেত্রে ট্যুশন প্রথা অবিশ্বাস্য ভূমিকা পালন করে।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করার জন্য শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সঠিক উপায়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। *যেসব অভিভাবক তাদের সন্তানদেরকে সামান্য বুঝতে না পারার পরপরই ট্যুশনের আশ্রয় নেন, সেটা তাদের সন্তানের জন্য ভালো নয়।* অভিভাবকদের উচিত শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করা যে আসলে তাদের সন্তানের সমস্যা কোথায় ও সেটা কিভাবে সমাধান করা যায়।
*অপরদিকে শিক্ষকদেরও উচিত তাদের শিক্ষা প্রদানের পদ্ধতি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করা।* শিক্ষার্থীরা যাতে ক্লাসে বসেই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারে, এমন শিক্ষণ পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। শিক্ষকদের উচিত দুর্বল শিক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত নজর দেওয়া এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের সহায়তা করা।
আমাদের শিক্ষকদের পাশাপাশি, অভিভাবকরাও তাদের সন্তানের শিক্ষার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়ার জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিত। সন্তানদেরকে পড়াশোনা করার জন্য নির্দিষ্ট সময় বের করা এবং সেই সময়ের মধ্যে তাদের পড়াশোনার উপর তাদের সহায়তা করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
যেহেতু শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবক – সকলের জন্যই ট্যুশন প্রথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু আমাদের সকলের উচিত এটাকে আরো উন্নত করার জন্য নিজেদের ভূমিকা পালন করা।
*"ট্যুশন প্রথাঃ শিক্ষাকে আরো সহজ করার উপায় নাকি অর্থের অপচয়?"*
আজকাল আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ট্যুশন প্রথা। অনেক শিক্ষার্থীর জন্য ট্যুশন প্রথা একটি বরদান হিসেবে কাজ করে থাকে কারণ, এটি তাদের বিভিন্ন কঠিন