টার্বো




আমার শৈশবের দিনে কাটত একটা ছোট্ট গ্রামে। আমাদের বাড়ির পাশ দিয়েই যেত একটা ছোট্ট খাল। খালের পাড়ে কিছুটা দূরে ছিল একটা ছোট্ট মন্দির। মন্দিরের পিছনে ছিল একটা ছোট্ট পুকুর। সেই পুকুরে গ্রামের সব ছেলেমেয়ে সাঁতার কাটত।
আমাদের বাড়ি থেকে পুকুরটা খুব কাছে হওয়ায় আমিও প্রায়ই যেতাম সাঁতার কাটতে। পুকুরের একপারে একটা বটগাছ ছিল। সেই গাছটার শিকরে বসে আমরা সাঁতার কাটার আগে কিছুক্ষণ আড্ডা মারতাম।
একদিন আমি সাঁতার কাটতে গিয়েছিলাম পুকুরে। সেদিন আমার সঙ্গে ছিল আমার বন্ধু সোহাগ। আমরা দুজনে একসাথে সাঁতার কাটছিলাম। হঠাৎ আমাদের নজরে পড়ল, পুকুরের এককোণে একটা ছোট্ট কচ্ছপ ভাসছে। কচ্ছপটা ছিল খুবই সুন্দর। তার খোলসটা ছিল সবুজ রঙের।
আমরা দুজনে কচ্ছপটাকে ধরার জন্য সাঁতার কাটতে শুরু করলাম। কিন্তু কচ্ছপটা ছিল খুবই দ্রুতগামী। আমরা কিছুতেই তাকে ধরতে পারছিলাম না।
এরপর সোহাগ একটা কৌশল অবলম্বন করল। সে পুকুরের একদিকে গিয়ে লুকিয়ে বসল। আর আমি পুকুরের অন্যদিক থেকে কচ্ছপটার দিকে সাঁতার কাটতে শুরু করলাম।
আমি যতই কচ্ছপটার কাছে যাচ্ছিলাম, সে ততই সোহাগের দিকে ছুটে যাচ্ছিল। শেষমেশ কচ্ছপটা সোহাগের কাছে পৌঁছে গেল। সোহাগ দ্রুত কচ্ছপটাকে ধরে ফেলল।
আমরা দুজনে খুব খুশি হলাম। আমরা কচ্ছপটাকে নিয়ে বটগাছের শিকরে গিয়ে বসলাম। কচ্ছপটাকে আমরা নাম দিলাম "টার্বো"।
টার্বো আমাদের খুব প্রিয় পোষা প্রাণী হয়ে উঠল। আমরা প্রতিদিন তাকে খাওয়াতাম এবং তার সঙ্গে খেলতাম।
একদিন আমরা টার্বোকে সাঁতার কাটানোর জন্য পুকুরে নিয়ে গেলাম। টার্বো পুকুরে নামার পরে খুব দ্রুত সাঁতার কাটতে শুরু করল। আমরা সবাই টার্বোর সাঁতার কাটার দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে গেলাম।
টার্বো ছিল সত্যিই খুব দ্রুতগামী কচ্ছপ। সে পুকুরের এককোণ থেকে অন্যকোণে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে পৌঁছে যেত।
আমরা টার্বোর সঙ্গে প্রায় দুই বছর একসাথে কাটিয়েছি। তারপর একদিন টার্বো হঠাৎই উধাও হয়ে গেল। আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু আর তাকে পাইনি।
আমরা সবাই টার্বোকে খুব মিস করি। আমরা জানি না সে কোথায় গেছে। কিন্তু আমরা কখনোই তাকে ভুলব না।
আমাদের সকলের জীবনে এমন কিছু পোষা প্রাণী আছে যাকে আমরা খুব ভালোবাসি। আমরা তাদের সঙ্গে অনেক সুখের মুহূর্ত কাটাই। কিন্তু একদিন তাদেরও আমাদের ছেড়ে চলে যেতে হয়।
যখন আমাদের পোষা প্রাণী আমাদের ছেড়ে চলে যায়, তখন আমরা খুব দুঃখ পাই। কিন্তু আমরা জানি যে, তারা সবসময় আমাদের হৃদয়ে থাকবে।