ডুরান্ড কাপ: ইতিহাস, বিজয়ী ও কিংবদন্তি




ফুটবলের জগতে ডুরান্ড কাপের নাম অতুলনীয়। এটি এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে পুরনো এবং মর্যাদাপূর্ণ ফুটবল প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম। চলুন ডুরান্ড কাপের আকর্ষণীয় ইতিহাস, বিজয়ী দল ও কিংবদন্তিদের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ইতিহাস

ডুরান্ড কাপের সূচনা ১৮৮৮ সালে। স্যার মরিস ডুরান্ডের সম্মানে এর নামকরণ করা হয়েছে, যিনি তৎকালীন ভারতের সেক্রেটারি ছিলেন। প্রথম ডুরান্ড কাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল শিমলার বার্লোগঞ্জ গ্রাউন্ডে। প্রতিযোগিতায় শুধুমাত্র ব্রিটিশ সৈন্যদলই অংশগ্রহণ করত।

ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে, বিভিন্ন ভারতীয় ক্লাব ও দল ডুরান্ড কাপে অংশগ্রহণ শুরু করে। প্রতিযোগিতাটি ক্রমশ জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এটি ভারতীয় ফুটবল ক্যালেন্ডারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে পরিণত হয়।

বিজয়ী দল

ইতিহাস জুড়ে, ডুরান্ড কাপের শিরোপা জিতেছে অনেক বিখ্যাত দল। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, গোয়া এফসি এবং বিএসএফ জেদ্দিহা ডুরান্ড কাপের সর্বাধিক সফল দলগুলোর মধ্যে রয়েছে।

সবচেয়ে বেশিবার ডুরান্ড কাপের শিরোপা জিতেছে মোহনবাগান, যারা প্রতিযোগিতাটি রেকর্ড ১৬ বার জিতেছে। তাদের সর্বশেষ শিরোপা এসেছে ২০১৫ সালে। ইস্টবেঙ্গল ডুরান্ড কাপ জিতেছে ১০ বার, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

কিংবদন্তি খেলোয়াড়

ডুরান্ড কাপ ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তিদের উৎপাদন করেছে। কিছু সবচেয়ে স্মরণীয় খেলোয়াড় যারা এই প্রতিযোগিতায় খেলেছেন তারা হলেন:

  • সৈয়দ আব্দুল রহিম (মোহনবাগান): ভারতীয় ফুটবলের "গ্র্যান্ড ওল্ড ম্যান" হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯৫০ সালে ডুরান্ড কাপ জয়ী মোহনবাগান দলের অধিনায়ক ছিলেন।
  • তুলসীদাস বলরাম (মোহনবাগান): ভারতের "ড্রিবলিং উইজার্ড" হিসেবে পরিচিত। তিনি ডুরান্ড কাপে দুর্দান্ত গোল করতেন এবং এই প্রতিযোগিতায় তাঁর গোলের রেকর্ড আজও অটুট রয়েছে।
  • পি. কে. ব্যানার্জী (মোহনবাগান): ভারতীয় ফুটবলের "ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক"। তিনি ১৯৭০ এবং 1980 এর দশকে মোহনবাগানের ডুরান্ড কাপ জয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন।
  • ইমারন খান (ইস্টবেঙ্গল): ভারতীয় ফুটবলের "বাদশাহ"। তিনি ১৯৯০ এবং 2000 এর দশকে ইস্টবেঙ্গলের ডুরান্ড কাপ জয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন।

বর্তমান অবস্থা

আজ, ডুরান্ড কাপ এখনও ভারতীয় ফুটবলের একটি প্রধান আকর্ষণ। এটি ভারতীয় সুপার লিগ এবং আই-লিগের মতো ঘরোয়া প্রতিযোগিতার পাশাপাশি একটি পৃথক টুর্নামেন্ট হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতাটিতে এখন ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক দল উভয়ই অংশগ্রহণ করে।

ভবিষ্যৎ

ডুরান্ড কাপের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলে মনে হচ্ছে। এটি ভারতীয় ফুটবল ক্যালেন্ডারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এবং এটি ভারতীয় খেলোয়াড়দের তাদের দক্ষতা প্রদর্শন ও উন্নত করার একটি দুর্দান্ত প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে চলেছে। যতই দিন যাবে, ততই ডুরান্ড কাপকে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও প্রতিযোগিতামূলক হতে দেখা যাবে, যা আগামী প্রজন্মের ফুটবল তারকাদের উত্থান ঘটাবে।

যেহেতু ডুরান্ড কাপ তার দ্বিতীয় শতকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এটি ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও উৎকর্ষের একটি চিরস্থায়ী স্মারক হিসাবে রয়ে যাবে।