ডঃ আ্যম্বেদকর: এক মহান জীবনের গল্প
সে এক যুগান্তকারী ব্যক্তিত্ব, যিনি ভারতের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন। তাঁর নাম ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর।
আমরা সকলেই জানি, তিনি ভারতীয় সংবিধানের জনক। কিন্তু এটাই কি তাঁর একমাত্র পরিচয়? অবশ্যই না। তিনি ছিলেন একজন উঁচু দরের আইনজ্ঞ, अर्थনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী এবং একজন বোদ্ধ ধর্মপ্রচারক।
ডঃ আ্যম্বেদকরের জীবন ছিল অত্যন্ত নাটকীয় এবং অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন ১৪ এপ্রিল, ১৮৯১ সালে মধ্যপ্রদেশের মহু শহরে একটি দরিদ্র হরিজন পরিবারে। তাঁর বাবা ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সাবাদার।
আম্বেদকরের শৈশব কেটেছিল অত্যন্ত কষ্টে। তাঁর পরিবার ছিল হরিজন, যারা ভারতের সমাজ ব্যবস্থায় সবচেয়ে নীচু স্তরে রাখা হতো। তিনি এবং তাঁর পরিবার বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের শিকার হতেন।
কিন্তু আ্যম্বেদকর ছিলেন এক অদম্য ইচ্ছাশক্তির অধিকারী মানুষ। তাঁর মধ্যে ছিল অসাধারণ প্রতিভা এবং শিক্ষার প্রতি তীব্র ক্ষুধা। তিনি অসাধারণ কষ্ট সহ্য করে পড়াশোনা করেন এবং সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯১৫ সালে আম্বেদকর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি একজন উঁচু দরের সৈনিক ছিলেন এবং দেশের প্রতি তাঁর ভালবাসা ছিল গভীর। কিন্তু সেনাবাহিনীতেও বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের শিকার হওয়ায় তিনি বেশি দিন সেখানে থাকতে পারেননি।
সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর আম্বেদকর আইন পড়ার জন্য লন্ডন যান। তিনি ১৯২৩ সালে বিএ, এলএলবি এবং ডিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ভারতে ফিরে এসে উঁচু দরের আইনজ্ঞ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন।
আম্বেদকর শুধুমাত্র একজন আইনজ্ঞই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক এবং সমাজ সংস্কারকও। তিনি হিন্দু সমাজে প্রচলিত বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর তোলেন। তিনি হরিজনদের জন্য সমান অধিকারের দাবী করেন।
আম্বেদকরের দর্শন কারল মার্কস এবং জন ডিউই এর রচনার দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ভারতীয় সমাজে প্রচলিত বর্ণবাদ এবং বৈষম্য দূর করার জন্য একটি সামাজিক বিপ্লব প্রয়োজন।
আম্বেদকর ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন এবং দলের অনেক নীতি এবং কর্মসূচির খসড়া প্রস্তুত করেন।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর আম্বেদকর ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত হন। তিনি ভারতীয় সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত করার দায়িত্ব পান।
আম্বেদকরের রচিত ভারতীয় সংবিধান একটি সুদীর্ঘ এবং জটিল দলিল। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় লিখিত সংবিধান। এটি ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং দায়িত্ব নিশ্চিত করে।
ডঃ আম্বেদকর শুধুমাত্র একজন মহান আইনজ্ঞ এবং সংবিধান প্রণেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন মহান সমাজ সংস্কারকও। তিনি হরিজনদের জন্য সমান অধিকারের দাবী করেন এবং হিন্দু সমাজে প্রচলিত বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর তোলেন।
তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে বৌদ্ধ ধর্মই একমাত্র ধর্ম যা বর্ণবাদ এবং বৈষম্যকে সমূলে উৎপাটন করতে পারে।
ডঃ আ্যম্বেদকর ৬ ডিসেম্বর, ১৯৫৬ সালে পরলোক গমন করেন। তিনি ভারতের ইতিহাসে একটি অমর ব্যক্তিত্ব হিসাবে স্মরণ করা হবেন। তাঁর মহান কাজ এবং অবদান ভারতীয় জনগণকে অনুপ্রাণিত এবং উদ্বুদ্ধ করে চলবে।