ত্রিনয়নী
আমাদের এই সৃষ্টিতে এমন অনেক কিছু আছে যা দেখতে অভ্যস্ত না হলে মনে হয় খুবই অদ্ভুত ও বিদঘুটে। কিন্তু তা নিয়ে আমরা ভয়, কুসংস্কার, ঘৃণা ও হিংসা প্রদর্শন করি কেন? দেখতে অন্যরকম বলে কি কেউ কখনোই আমাদের পরোয়া করে না? অথচ হিসেবটা আমাদের সবসময় নিজেরাই করি।
এক তরুণীর গল্প শুনিয়ে আমি আমার কথা শুরু করতে চাই। মেয়েটি অসামান্য সুন্দরী। সবাই তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ। কিন্তু তার মাথার সমস্যা আছে। সবার মতো তার চোখও দুটি নয়, তিনটি। তার এই তিনটি চোখ নিয়ে অন্যদের এতটাই সমস্যা হয় যে তারা মেয়েটিকে অসুন্দরই ভেবে থাকে। মেয়েটির জন্য এটাই সবচেয়ে বড় কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
একদিন মেয়েটি আর সহ্য করতে না পেরে একজন জাদুকরের কাছে যায়। জাদুকর মেয়েটির সমস্যা শুনে বলে, ‘আমি তোমার তৃতীয় চোখটি তুলে নিতে পারি আর অন্যদের মতো দুটি চোখ করে দিতে পারি। কিন্তু তাতে তোমার ভালোর চেয়ে মন্দের দিকটিই বেশি।’
জাদুকর মেয়েটিকে বুঝিয়ে দেয়, ‘মানুষ কখনোই তোমার তিনটি চোখের সৌন্দর্য বুঝতে পারবে না। কিন্তু তুমি যদি এই তৃতীয় চোখটিকে আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করো, তাহলে তুমি দেখতে পাবে এমন অনেক কিছু যা অন্য কেউ দেখতে পায় না। তুমি অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবে, জীবনের রহস্যগুলো অন্যদের চেয়ে ভালোভাবে বুঝতে পারবে।’
জাদুকরের কথা শুনে মেয়েটি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে। সে তার তৃতীয় চোখটিকে সহ্য করতে শেখে। এমনকি তার এই চোখকে তার সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে দেখতে শেখে।
আমাদের সবারই এমন কিছু সীমাবদ্ধতা বা অসম্পূর্ণতা আছে যা নিয়ে আমরা লজ্জিত বা বিরক্ত বোধ করি। কিন্তু আমাদের উচিত এই সবগুলোকেই গ্রহণ করা এবং এইগুলির মধ্যেও কিছু ভালো দিক খোঁজার চেষ্টা করা। এসব সীমাবদ্ধতাকে আমাদের প্রেরণা হিসেবে নেওয়া উচিত। যাতে আমরা অন্যদের চেয়ে আলাদা ও অনন্য হতে পারি, জীবনে কিছু অসাধারণ কাজ করতে পারি।