বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত অন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রবেশদ্বার পোর্ট ব্লেয়ার। এই দ্বীপটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক তাত্পর্য, দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকদের মন কাড়ে।
এই শহরটি ক্যাপ্টেন আর্চিবল্ড ব্লেয়ারের নামে নামকরণ করা হয়েছে, যিনি একজন ব্রিটিশ উপনিবেশিক নৌবাহিনীর অফিসার ছিলেন। পোর্ট ব্লেয়ারের আধুনিক ইতিহাসে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং এটি এখন দ্বীপপুঞ্জের প্রশাসনিক রাজধানী হিসাবে কাজ করে।
সেলিউলার জেল পোর্ট ব্লেয়ারের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি। এটি ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ব্রিটিশদের দ্বারা নির্মিত একটি জেল ছিল। জেলটি 9টি ব্লক দিয়ে গঠিত এবং এর নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যে বন্দীরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে অক্ষম ছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য জেলের অমানবিক অবস্থার কারণে এটি "কালাপানি" নামে পরিচিত।
রস দ্বীপ:রস দ্বীপ পোর্ট ব্লেয়ার থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ছোট্ট দ্বীপ। এই দ্বীপটি একসময় ব্রিটিশদের প্রশাসনিক সদর দফতর ছিল। বর্তমানে, এই দ্বীপটি সুন্দর সৈকত, স্বচ্ছ জল এবং প্রচুর প্রবাল প্রাচীরের জন্য জনপ্রিয়। দ্বীপটির উপর ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে জরাজীর্ণ ব্রিটিশ ভবনগুলি।
চিড়িয়া টাপু:পোর্ট ব্লেয়ার থেকে প্রায় 30 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চিড়িয়া টাপু মূলত দুটি উপদ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। এই অঞ্চলটি তার সূর্যাস্তের জন্য বিখ্যাত, যা সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি সহ প্রকাশ করে। এখানে নানা রকমের পাখিও দেখা যায়, যার মধ্যে কিছু বিরল এবং বিপন্ন।
জ্যোতিরঘু স্বামী মন্দির:জ্যোতিরঘু স্বামী মন্দিরটি পোর্ট ব্লেয়ারের প্রাচীন মন্দিরগুলির মধ্যে একটি, যা ভগবান বিষ্ণুকে উৎসর্গ করা হয়েছে। মন্দিরটির একটি অনন্য স্থাপত্য রয়েছে, যেখানে তামিলনাড়ু এবং উত্তর ভারতীয় স্থাপত্যের উপাদানগুলি মিশে গেছে। হিন্দুদের জন্য এই মন্দিরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান।
কর্বিন্স কোভ বিচ:কর্বিন্স কোভ বিচ পোর্ট ব্লেয়ারের অন্যতম জনপ্রিয় সৈকত। এই সৈকতটি সাদা বালুক, স্বচ্ছ জল এবং নারকেল গাছের জন্য বিখ্যাত। সূর্যাস্তের সময় এই সৈকতটির দৃশ্য নয়নাভিরাম। এছাড়া এটি সাঁতার, স্নরকেলিং এবং ডাইভিং এর জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা।
স্ন্যাক আইল্যান্ড:স্ন্যাক আইল্যান্ড পোর্ট ব্লেয়ার থেকে একটি জনপ্রিয় নৌ-ভ্রমণ গন্তব্য। এই দ্বীপটি সাপের আকৃতির, যা এটির নামের উৎপত্তি। দ্বীপের চারপাশে স্বচ্ছ জল এবং প্রবাল প্রাচীর রয়েছে, যা এটিকে ডাইভার এবং স্নরকেলারদের জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা করে তোলে।
পোর্ট ব্লেয়ার ভ্রমণের সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। এই সময়টি শীতকালীন মরসুমে পড়ে, যখন আবহাওয়া আনন্দদায়ক এবং পর্যটকদের জন্য উপভোগ্য। গ্রীষ্মকালে, তাপমাত্রা বেশি হয় এবং আর্দ্রতা বেড়ে যায়, যা ভ্রমণকে কিছুটা অস্বস্তিকর করে তুলতে পারে।
পোর্ট ব্লেয়ারে বিভিন্ন বাজেট এবং প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী বিভিন্ন হোটেল এবং রিসর্ট রয়েছে। পর্যটকরা তাদের পছন্দ এবং বাজেটের উপর ভিত্তি করে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন।
পোর্ট ব্লেয়ারে রেস্তোরাঁ এবং খাবারের স্টলের কোন অভাব নেই। পর্যটকরা স্থানীয় সামুদ্রিক খাবার থেকে আন্তর্জাতিক খাবারের মধ্যে বেছে নিতে পারেন। এই দ্বীপের নিজস্ব একটি অনন্য খাবার সংস্কৃতি রয়েছে, যা ভারতীয় এবং বার্মিজ প্রভাবের সংমিশ্রণ।
পোর্ট ব্লেয়ার ভারতের প্রধান শহরগুলির সাথে ভালভাবে সংযুক্ত। দেশের বিভিন্ন শহর থেকে ভীরগাটি বিমানবন্দরে সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায়। এছাড়াও, চেন্নাই এবং বিশাখাপত্তনম থেকে পোর্ট ব্লেয়ারে শিপিং পরিষেবা রয়েছে।
পোর্ট ব্লেয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক তাত্পর্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের একটি অনন্য মিশ্রণ প্রদান করে। বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত এই দ্বীপটি পর্যটকদের শান্তি এবং সুযোগ-সুবিধার একটি নিখুঁত মিশ্রণ প্রদান করে। পোর্ট ব্লেয়ার ভারতের অন্যতম অনন্য এবং অবিস্ম