থ্রিসুর শহরে বসন্তের আগমনকে চিহ্নিত করে একটি আলোক উজ্জ্বল এবং শব্দপ্রবাহযুক্ত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই অনাবিল উৎসবে, উৎফুল্লতার প্রদীপ জ্বলে উঠে এবং সংগীতের ধ্বনি তরঙ্গায়িত হয়, যা রাজ্যের সবচেয়ে বর্ণিল অনুষ্ঠানগুলিকে জীবন্ত করে তোলে।
থ্রিসুর পুরম, যা সাধারণত এপ্রিল বা মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়, হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে মেডাম দিনে অনুষ্ঠিত হয়, যা এই 지역ের দুটি প্রাচীন মন্দির, পরমেকাবু দেবী মন্দির এবং ত্রিশিভা পরমশিব মন্দিরের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতামূলক উৎসব।
পুরমের প্রধান আকর্ষণ হল তার অসংখ্য হাতির উপস্থিতি, যাদের শরীর রঙিন আলোকসজ্জায় চিত্রিত করা হয়েছে, যা শহরের রাতের আকাশকে আলোকিত করে। প্রতিটি মন্দির দলের দুটি দল রয়েছে, যাদের "পারাম্বু" বলা হয়, যারা প্রদীপ এবং বাদ্যযন্ত্র রেখে বড়, অলঙ্কৃত হস্তীটিকে রক্ষা করে। হস্তীদের কোমর জুড়ে শত শত স্বর্ণের আলোকসজ্জা সাজানো থাকে, যা উজ্জ্বল রঙ এবং জটিল নকশা দিয়ে আলোকিত করে।
পুরমের শব্দময় শব্দতরঙ্গও সমানভাবে দর্শনীয়, যা সানাই, চুডা এবং উলক্কুতুম্বি সহ বেশ কয়েকটি বাদ্যযন্ত্রের সিম্ফনি তৈরি করে। সানাইয়ের শঙ্খমুখী আওয়াজ আকাশে উঁচু হয়ে যায়, যখন চুডা, একটি বড় পাখির দৃশ্যের মতো আকৃতির একটি ব্রাস বাদ্যযন্ত্র, একটি গম্ভীর সুর কম্পিত করে। উলক্কুতুম্বি, একটি ড্রামের মতো বাদ্যযন্ত্র, উৎসবের একটি জটিল তাল তৈরি করে, যা হাতির দুলকে মিলিয়ে দেয়।
পুরম শুধুমাত্র আলো এবং শব্দের প্রদর্শনী নয়, এটি একটি গভীরভাবে ভক্তিমূলক উৎসবও। ভক্তরা সকালে মন্দিরে ভিড় জমান, দেব-দেবীদের পূজা করেন এবং তাদের আশীর্বাদ কামনা করেন। উৎসবের প্রধান দিনে, দুটি মন্দির দল শহরের প্রধান রাস্তা দিয়ে একটি বিশাল মিছিল বের করে, যাকে "ভরমাট্টম" বলা হয়। মিছিলে বিশাল আলোকিত হস্তী, বাদ্যযন্ত্র এবং ভক্তদের একটি উন্মত্ত জনতা উপস্থিত থাকে, যারা দেবতার প্রতি তাদের ভক্তি প্রকাশ করে।
থ্রিসুর পুরম শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি সার্বজনীন উদযাপনও বটে। এটি কেরালা জুড়ে এবং ভারতের অন্যান্য অংশের মানুষকে আকর্ষণ করে, যারা এই দর্শনীয় উৎসবের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আসে। স্থানীয়রা এবং পর্যটকরা উভয়ই রাস্তায় ভিড় জমায়, হাতিদের আলোকসজ্জা এবং সঙ্গীতের ধ্বনিতে মুগ্ধ হয়ে যায়।
থ্রিসুর পুরম কেরালা এবং ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হিসাবে দাঁড়িয়েছে। এটি আলো, শব্দ, ভক্তি এবং উদযাপনের একটি সিম্ফনি, যা দর্শকদের মনে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি তৈরি করে। এই তিন দিনের উৎসব কেরালায় একটি অপরিহার্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে, যা বিশ্বজুড়ে মানুষের কল্পনাকে উদ্দীপ্ত করে।