সেই রাতে ছিল নক্ষত্র মণ্ডিত ডিসেম্বরের ১৫ রাত। ঠান্ডায় জমে যাওয়া শরীরকে কঁকানি দিচ্ছিল। কত কষ্টে কত শীতে হাঁটতে হচ্ছে দুজনে। তবুও তাঁরা সারাদিনের দুঃখ ভুলে, সকল কষ্ট গুলিয়ে দুজনে মিলে হাসি তামাসার সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন।
এই শহরের রাস্তা দিয়ে তাঁদের হাঁটার দৃশ্য কোথাও ভিডিও হতে পারত। কিন্তু, ভাগ্য তাদের এতটাই মুখ ফিরিয়েছে যে তাঁদের সেই সুযোগও হয়নি। কিন্তু ঠান্ডায় জমে যাওয়া রাস্তায়, রাস্তার ধারের দোকানে, চায়ের দোকান আর সামনে মোড়ে আলো জ্বলজ্বল করা মন্দিরখানা, এই দৃশ্যগুলো কোনদিনও তাঁরা ভুলতে পারবেন না।
রাস্তায় বেঘরেরা ঠান্ডায় জমে গিয়ে কুঁকড়ে শুয়ে আছে। কেউ তাঁদের খবর নেয়নি আজও। কেউ তাঁদের শীত থেকে বাড়ি দেয়নি, কেউ তাঁদের খেতে দেয়নি। তাঁরাও কি মা-বাবা হয়নি? তাঁদের কি সন্তান নেই? এমন প্রশ্নের অবান্তর উত্তর খুঁজতে গিয়ে আরেকটু এগিয়ে যেতেই আলোয় ঝলমল করছে ঐ মন্দির।
মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরা প্রার্থনা করলেন, "হে ঈশ্বর, তুমি আমাদের শীত, তুমি আমাদের খাবার, তুমি আমাদের কাপড় দিয়েছ। কিন্তু, আমাদের ঘর দাও।" প্রার্থনা শেষ হতেই মন্দির থেকে বেরিয়ে এলেন একটি লোক। লোকটি তাঁদের দিকে আসতেই তাঁরা ভয় পেয়ে গেলেন।
লোকটা হয়তো সমস্ত কথা বুঝে গেলেন তাই তিনি তাঁদের বললেন, "আসুন, আমার সাথে চলুন।"
লোকটির কথায় তাঁদের মুখে হাসি ফিরে এল। হয়তো ঈশ্বরের কৃপা হয়েছে, আজ রাতটা তাঁরা অন্ধকারে কাটানোর পরিবর্তে আলোয় কাটাবেন। আজ রাতটা তাঁরা ক্ষুধার্ত কাটানোর পরিবর্তে পেট ভরে খেয়ে কাটাবেন। হয়তো এই শীতে জমে আর জীবন ফেরত দেবেন না তাঁরা।
তাঁরা দুজনেই লোকটির সাথে গেলেন। গেলেন একটা সুন্দর বাসায়। বাসার চারপাশে ফুলের গাছ, সার সার সবুজ গাছ আর সামনে একটা শান্ত পুকুরে পদ্মফুল। এমন একটা সুন্দর বাসা তাঁরা আজ পর্যন্ত দেখেননি।
বাসায় প্রবেশ করতেই একটা ঘর দেখা গেল। ঘরে সুন্দর কার্পেট, সুন্দর খাট আর একদম পরিষ্কার ঘর। ভাবতেই পারছেন না এতো সুন্দরভাবে সাজানো ঘরে রাতটা কাটাবেন।
বাসার মালিক তাঁদের খেতেও দিলেন। খাওয়ার পরে তাঁরা ঘুমিয়ে পড়লেন। সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর তাঁরা দেখলেন ঘরের সামনে কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।
তাঁরা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখলেন। কয়েকজন সাংবাদিক তাঁদের ভিডিও করছে, কয়েকজন ছবি তুলছেআর কয়েকজন তাঁদের প্রশ্ন করছে।
এতো কিছু তাঁরা আজ আগে কখনও দেখেননি। তবুও সবার প্রশ্নের উত্তর দিলেন, সবার ছবি তুলতে দিলেন।
সবার শেষে একজন সাংবাদিক তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, "এতো দিন দুঃখে কষ্টে কি ভয় হয়নি?"
তিনি হেসে উত্তর দিলেন, "আমি প্রত্যেকদিন ঈশ্বরকে শুধু একটাই প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাকে পথ দেখান, ঠিক তেমনিভাবেই তিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন।"