দীপাবলী উৎসব




দীপাবলী বা দীপালী হল হিন্দুদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসব অশ্বিন বা কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে পালিত হয়। আশ্বিন কার্তিক মাস শারদীয় দুর্গোৎসবের মাধ্যমে শুরু হয় এবং শেষ হয় দীপাবলী দিয়ে। বাংলা ক্যালেণ্ডার অনুসারে, দীপাবলী সাধারণত অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে পালিত হয়।
দীপাবলী শব্দের অর্থ ‘দীপের শ্রেণী’। এই দিন সন্ধ্যায় বাড়িঘর, মন্দির এবং রাস্তাঘাটে প্রচুর প্রদীপ জ্বালানো হয়। এটি আলোকের উৎসব। অন্ধকারের উপর আলোর জয়ের উৎসব। বলা হয়ে থাকে যে, এই দিনে দেবী লক্ষ্মী ঘরে ঘরে বিচরণ করেন এবং যে বাড়িতে প্রদীপ জ্বালানো থাকে, সেই বাড়িতে তিনি প্রবেশ করেন। তাই দীপাবলীতে বাড়িঘর পরিষ্কার করে সাজানো হয়। রঙিন আল্পনা দেওয়া হয়। প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালানো হয়।
দীপাবলীর সঙ্গে অনেক কিংবদন্তি জড়িয়ে আছে। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, এই দিনটি দেবরাজ ইন্দ্রের পরাজয়ের দিন। বলা হয়, ত্রেতাযুগে দৈত্যরাজ রাবণ স্বর্গ আক্রমণ করে ইন্দ্রকে পরাজিত করে স্বর্গ দখল করে নিয়েছিল। রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে ইন্দ্র পরাজিত হয়ে দেবলোক থেকে পালিয়ে যান। ইন্দ্রের পরাজয়ের খবর পেয়ে স্বর্গের অন্যান্য দেবদেবীরা বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। তখন ভগবান বিষ্ণুর স্ত্রী দেবী লক্ষ্মী স্বর্গে প্রদীপ জ্বালানোর পরামর্শ দেন। দেবী লক্ষ্মীর পরামর্শ অনুযায়ী স্বর্গে প্রচুর প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রদীপের আলোতে স্বর্গ আবার আলোকিত হয়ে ওঠে এবং দেবদেবীদের মনে আবার আশার আলো জাগে। প্রদীপের আলো দেখে দেবরাজ ইন্দ্রও স্বর্গে ফিরে আসেন এবং রাবণকে পরাজিত করে স্বর্গ দখল করে নেন।
আরেকটি কিংবদন্তি অনুসারে, দীপাবলী হল ভগবান রামচন্দ্রের অযোধ্যা ফেরার স্মরণে উৎসব। বলা হয়, রামচন্দ্র চৌদ্দ বছর বনবাসের পর রাবণ বধ করে অযোধ্যা ফিরে এসেছিলেন। অযোধ্যাবাসীরা রামচন্দ্রের স্বাগত জানানোর জন্য বাড়িঘরে প্রদীপ জ্বালান এবং আতশবাজি ছোঁড়েন। রামচন্দ্রের অযোধ্যা ফেরার খবর পেয়ে সকল দেবদেবীও স্বর্গ থেকে অযোধ্যায় এসেছিলেন। সেই থেকেই দীপাবলী উৎসব পালন করা হয়।
দীপাবলী উৎসবের সঙ্গে অনেক রকম রীতিনীতি ও লোকাচার জড়িয়ে আছে। এই দিনে লক্ষ্মীপুজো করা হয়। লক্ষ্মী হলেন ধনসম্পত্তি এবং উন্নতির দেবী। লক্ষ্মীপুজোর দিন লক্ষ্মীর মূর্তি বা ছবির সামনে প্রদীপ জ্বালানো হয় এবং বিশেষ পুজো করা হয়। পুজোর পরে লক্ষ্মীর আরতি উতারা হয় এবং প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
দীপাবলীর দিনে দীপদান করা হয়। এই দিনে প্রদীপ জ্বালানোর অনেক কাহিনী এবং কিংবদন্তি রয়েছে। বলা হয় যে, এই দিনে যে বাড়িতে যত বেশি প্রদীপ জ্বালানো হয়, সেই বাড়িতে তত বেশি ধনসম্পত্তি এবং উন্নতি হয়। দীপদানের সময় ‘সুখী भव’ বলে মন্ত্র উচ্চারণ করা হয়।
দীপাবলীর সঙ্গে আরও একটি রীতিনীতি জড়িয়ে আছে, যা হল গোবর্ধন পুজো। এই পুজো রাধা-কৃষ্ণের সঙ্গে সম্পর্কিত। বলা হয়, একবার দেবরাজ ইন্দ্রের অহংকার ভাঙার জন্য কৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বত তুলে নিয়ে সাতদিন সাতরাত রক্ষা করেছিলেন। এই ঘটনার স্মরণে দীপাবলীর পরের দিন গোবর্ধন পুজো করা হয়।
দীপাবলী হল হিন্দুদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসব আলোকের উৎসব, সুখের উৎসব, সমৃদ্ধির উৎসব। এই দিনে সবাই সুখে-শান্তিতে দীপাবলী উৎসব পালন করুন এবং জীবনে সবসময় আলোকিত থাকুন।