দেবশযনী একাদশী
আপনি কি কখনও ভেবেছেন যে অলসতা একটি ভাল জিনিস হতে পারে? ভাল, এটির অর্থ যদি বিষ্ণু সম্পর্কে গভীর ধ্যান, জ্ঞান ও প্রেমে নিমগ্ন থাকা হয়, তাহলে অবশ্যই। দেবশযনী একাদশী, যা আষাঢ় মাসের শুক্লা একাদশী তিথিতে উদযাপিত হয়, বিষ্ণুদেবের সেই অলসতার সাথে যুক্ত একটি বিশেষ পবিত্র দিন।
আপনি জানেন, বিষ্ণুদেবের চার মাসের ঘুমের সময়কাল শুরু হয় দেবশযনী একাদশী থেকে এবং কার্তিক মাসের দেবোত্থানী একাদশী পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই ঘুমের সময়কালকে চতুর্মাস বলা হয়। এই চার মাস দৈহিক ও আধ্যাত্মিক পুনর্নির্মাণের সময়। প্রচণ্ড গ্রীষ্মের পরে বর্ষাকাল শুরু হয় এবং প্রকৃতিও নিজেকে নবায়ন করার জন্য প্রস্তুত হয়। আমাদের দেহ এবং মনও এই সময়ে বিশ্রাম এবং পুনর্ভারের প্রয়োজন বোধ করে।
দেবশযনী একাদশীতে, ভক্তরা বিষ্ণুদেবকে তুলসী দল, ফুল, ফল এবং মিষ্টি উপহার দিয়ে পূজা করেন। তারা উপবাস করেন, প্রার্থনা করেন এবং বিষ্ণুদেবের মহিমা কীর্তন করেন। বিশ্বাস করা হয় যে, এই পবিত্র দিনে বিষ্ণুদেবের পূজা করলে পূর্ববর্তী জন্মের সব পাপ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
এই উপবাসে, ভক্তরা তামসিক খাবার যেমন মাংস, ডিম এবং মদ ত্যাগ করেন। তারা সাত্ত্বিক খাবার খান যেমন ফল, সবজি এবং দুধ। এটি শরীর এবং মনকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
দেবশযনী একাদশীর সঙ্গে জড়িত একটি আকর্ষণীয় কিংবদন্তীও আছে। কিংবদন্তি অনুসারে, একবার মহাবিষ্ণু যখন বৈকুণ্ঠে ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন শঙ্খচূড় নামে এক দৈত্য তাঁর রাজ্য আক্রমণ করে। বিষ্ণুর অনুপস্থিতিতে, ব্রহ্মা, শিব এবং দেবতারা শঙ্খচূড়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ব্যর্থ হন। অবশেষে, দেবতারা বিষ্ণুদেবকে জাগিয়ে তোলার জন্য তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীদেবীর কাছে যান। লক্ষ্মীদেবী বিষ্ণুদেবের বিশ্রামে বিঘ্ন ঘটাতে চাননি। কিন্তু তিনি দেবতাদের বিপর্যয় বুঝতে পেরে বিষ্ণুদেবকে জাগিয়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন।
বিষ্ণুদেব জেগে উঠে শঙ্খচূড়কে পরাজিত করেন এবং দেবতাদের রক্ষা করেন। তিনি কৃতজ্ঞতায় দেবতাদের বলেন, "আজ থেকে, আষাঢ় মাসের শুক্লা একাদশী তিথিতে আমি চার মাসের জন্য ঘুমাবো। এই সময়টিকে চতুর্মাস বলা হবে এবং এই সময়কালে আমার ভক্তরা আমাকে তুলসী দল, ফুল, ফল এবং মিষ্টি উপহার দিয়ে পূজা করবেন।"
তাই, দেবশযনী একাদশী একটি বিশেষ দিন যখন আমরা বিষ্ণুদেবকে তাঁর অলসতার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এটি আধ্যাত্মিক পুনর্নির্মাণ এবং পূর্ববর্তী জন্মের পাপ থেকে মুক্তির একটি সময়। আসুন আমরা এই পবিত্র দিনটি উপবাস, প্রার্থনা এবং বিষ্ণুদেবের মহিমা কীর্তন করে উদযাপন করি।