নাগপঞ্চমীর রহস্য উদঘাটন




  • উপক্রমণ:
  • সর্প, মানুষের অন্যতম প্রাচীন শত্রু, এখনও আমাদেরকে রহস্যময় এবং ভয়ঙ্কর মনে হয়। কিন্তু কিংবদন্তি অনুসারে, এই প্রাণীটির সাথে দেবী দুর্গার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের পঞ্চমী তিথিতে, নাগ পঞ্চমী উৎসবটি ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে পালিত হয়। এই উৎসবে সর্পকে পূজা করা হয় এবং বিষের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কামনা করা হয়।
  • নাগের উৎপত্তি:
  • পুরাণ অনুসারে, সর্পের উৎপত্তি পিতামহ ব্রহ্মার হাঁচি থেকে। ঋষি কশ্যপের স্ত্রী কদ্রুর গর্ভ থেকে তাদের জন্ম। কিন্তু আরও জনপ্রিয় একটি傳說 আছে যে, নীলিমা ও সুদর্শন নামক দুটি সর্প দেবী শিবনারায়নীর কানে ভুষণ হিসেবে থাকত। তাদেরই বংশধররা সকল সর্প।
  • নাগ দেবতা:
  • নাগকন্যা মনসা ও তাঁর পিতা নাগরাজ বাসুকি ভারতের সবচেয়ে পূজিত নাগ দেবতা। মনসা বিষের দেবী হিসেবে পরিচিত এবং তাঁর কৃপায় বিষাক্ত প্রাণীর কামড় বিষহীন হয়। অন্যদিকে, বাসুকি শিবের গলায় সর্প হিসেবে বসে থাকেন। তিনি ஞান ও সুরক্ষার প্রতীক।
  • নাগ পঞ্চমীর তাৎপর্য:
  • নাগ পঞ্চমীতে সর্পকে পূজা করার প্রধান উদ্দেশ্য হল বিষাক্ত প্রাণী থেকে সুরক্ষা পাওয়া। বলা হয়ে থাকে যে, এই দিনে সর্পের দেহে প্রভু নারায়ণের অংশ সঞ্চারিত হয়। তাই তাদেরকে খাবার ও দুধ নিবেদন করলে বিষের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • আঞ্চলিক রীতিনীতি:
  • নাগ পঞ্চমীর আঞ্চলিক রীতিনীতি স্থানভেদে ভিন্ন হয়। কেরলের কিছু অঞ্চলে, এই দিনে "সর্পকলি" নামক একটি খেলা খেলা হয় যেখানে লোকেরা সর্পের ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং কৌতুক করে। মহারাষ্ট্রে, মহিলারা ঘরের সামনে সর্পের ছবি আঁকে এবং তাদেরকে পূজা করে।
  • বর্তমান যুগে নাগ পঞ্চমী:
  • বর্তমান যুগে, নাগ পঞ্চমী বিষাক্ত প্রাণী থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ সচেতনতার একটি দিন হিসেবেও পালিত হয়। এই দিনে সর্পের আবাসস্থলগুলির রক্ষা ও তাদের সংরক্ষণের উপর জোর দেওয়া হয়।
  • নাগ পঞ্চমী উদযাপন:
  • নাগ পঞ্চমীতে সর্পকে দুধ, মিষ্টিজাতীয় খাদ্য ও ফুল নিবেদন করা হয়। কিছু লোক সর্পের গর্তে দুধ ঢালেন। সর্পের ছবিও পূজা করা হয় এবং দেবী মনসাকে প্রার্থনা করা হয়। এই উৎসবের সাথে যুক্ত কিছু কিংবদন্তি ও লোককাহিনীও রয়েছে।
  • উপসংহার:
  • নাগ পঞ্চমী ভারতীয় সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এটি সর্পের ভয়কে দূর করার পাশাপাশি পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও দেয়। কিংবদন্তি, রীতিনীতি ও বিশ্বাসের সাথে জড়িত এই উৎসবটি আমাদের প্রकृति ও এর সকল প্রাণীর প্রতি সম্মান এবং কৃতজ্ঞতার শিক্ষা দেয়।