নাগ পঞ্চমীর রহস্য-রোমাঞ্চ




আমাদের দেশে বহু বছর আগে থেকেই অনেক ধরনের উৎসব ধর্মী রীতিনীতি চলে আসছে. প্রতিটি রীতিনীতির সাথেই জড়িয়ে থাকে কিছু না কিছু কাহিনী, ভয়, রহস্য আর কিংবদন্তী. সেই রকমই একটি হলো নাগ পঞ্চমী. নাগ পঞ্চমীর দিনে পঞ্চমীর পূজো করা হয়. তবে মূলত, সাপ দেবতার পূজোর উৎসব এটি। সাপের কামড় থেকে বাঁচার জন্য অধিকাংশ ভারতের গ্রামীণ এলাকায় এই পূজো হয়ে থাকে। এই দিনে কোনো সূত্রের মাধ্যমে সাপের কামড় খেলে আর ভয় নেই।
নাগ পঞ্চমীর মূলত নাগ দেবতাদের পূজার দিন। প্রাচীন ভারতীয় মহাকাব্য যেমন মহাভারত এবং রামায়ণে সাপের অলৌকিক শক্তি ও মহিমা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। হিন্দুশাস্ত্র মতে, নাগ দেবতারা পৃথিবীর রক্ষাকর্তা দেবতা হিসাবে বিবেচিত হন। তারা মূলত পৃথিবীর অভিভাবক দেবতা হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। সেইজন্য নাগ পঞ্চমীর দিনে সবাই নিজের সুরক্ষার জন্য নাগ দেবতার পূজো করে থাকেন।
এই দিনে দুধে সিদ্ধ করা তুলা দিয়ে সাপের মূর্তি তৈরি করা হয়। এবং পঞ্চমীর দিনে সকালে সেই তুলার সাপের মূর্তিকে ঘরে ঘরে ঘুরিয়ে সাপের কামড় থেকে রক্ষার জন্য সাপ দেবতার নামে পূজো করা হয়। আবার কোথাও কোথাও গরুর গোবর দিয়ে সাপের মূর্তি তৈরি করে তার পূজো করা হয়।
আরও একটি কিংবদন্তি আছে নাগ পঞ্চমীর। ধারণা করা হয়, এইদিনে পূজো করলে নাগ দেবতার কৃপায় সাপের কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিংবদন্তি অনুযায়ী, নাগপঞ্চমী তিথিতে মহর্ষি জমদগ্নির পাঁচ পুত্র সাপের কামড়ে মারা যায়। তখন জমদগ্নি তার স্ত্রী রেণুকা দেবীর কাছে তাঁর পুত্রদের পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রার্থনা করেন। রেণুকা দেবী তার মন্ত্রের সাহায্যে তার পুত্রদের সাপের বিষের প্রভাব থেকে মুক্ত করেন। তাই এই দিনে সাপের কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশেষ পূজো করা হয়।
এই ছাড়াও, কিংবদন্তি অনুযায়ী, একবার শ্রীকৃষ্ণের পত্নী সত্যভামার পায়ে সাপ কামড় দিয়েছিল। তখন শ্রীকৃষ্ণ গরুড়ের সাহায্য নিয়ে সেই সাপকে বধ করেন। সেইদিন ছিল পঞ্চমী তিথি। তাই এইদিন সাপের ভয় থেকে মুক্তি পেতে নাগ পঞ্চমীর পূজো করা হয়।
এই দিনে সাপের মূর্তিকে দুধ, ফুল, চন্দন ইত্যাদি দিয়ে পূজো করা হয়। কিছু কিছু জায়গায় সাপের মূর্তির পাশে জলের কলসী রাখা হয়। এই দিনে অনেকে উপবাস থাকেন এবং ভগবান শিবের পূজো করেন। এছাড়াও, এই দিনে বিশেষ ধরনের খাবার খাওয়া হয়। যেমন- খিচুড়ি, পুলি, লাড্ডু ইত্যাদি।
তবে অনেক মানুষ অজ্ঞতার কারণে এই দিনে সত্যিকারের সাপকে পূজো করেন। এটি একটি ভুল পদ্ধতি। কারণ সাপ একটি বিষাক্ত প্রাণী। তাছাড়া, সাপেরা প্রাকৃতিকভাবেই মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকে। তাই অজ্ঞানতাবশত সাপকে পূজো করা ঠিক নয়। নাগ পঞ্চমীর দিনে সাপের মূর্তির পূজো করাই সঠিক পদ্ধতি।